গৌরনদী
নির্বাচনোত্তর সহিংসতা ॥ গৌরনদীতে পরাজিত প্রার্থীর সশস্ত্র হামলা ভাঙচুর, আগৈলঝাড়ায় বাড়িতে আগুন, উজিরপুরসহ আহত-৭০
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী, অগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পরাজিত প্রার্থীরা হামলা চালিয়ে বসত ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিজয়ী ও পরাজিত মেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭০ আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী, আহতরা জানান, ইউপি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পর গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের আধুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে হামলা চালায় ৩নং ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্য প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ ও তার সমর্থকরা। ৩৭ ভোটের ব্যবধানে নব-নির্বাচিত সদস্য আনিচুর রহমান মোল্লা অভিযোগ করেন, ভোট গণনার শেষে কেন্দ্রে বসে ফলাফল ঘোষনার পর পরই পরাজিত প্রার্থী ও পুলিশের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী অস্ত্র ব্যবসায়ী মো. হারুন অর রশিদ তার ৩০/৩৫ জন সমর্থককে নিয়ে কেন্দ্রে হামলা চালায়। হামলাকারীরা প্রতিপক্ষ সমর্থকদের মারধর করে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেডের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমান সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে আটকা পড়াদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। হামলায় নির্বাচিত সদস্য আনিচুর রহমান মোল্লা, তার সমর্থক আরিফ হোসেন, আলম মোল্লাসহ কমপক্ষে ১০জন আহত হয়। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পরাজিত প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ।
গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন খোকন খান ও সোবাহান হাওলাদার। স্থানীয়রা জানান, পরাজিত প্রার্থী সোবাহান হাওলাদার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় সোবাহান হাওলাদারের নেতৃত্বে তার ভোটার সমর্থকসহ ৫ শতাধিক আত্মীয় স্বজন ঢাকা – বরিশাল মহাসড়কের বার্থী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এতে রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। আটকা পড়ে দুরপাল্লার শতাধিক বাস। খবর পেয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ নেতৃবৃন্দ ঘটাস্থলে পৌছে অবরোধ প্রত্যাহারের চেষ্টা করেন। এতে ব্যার্থ হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে লাঠিপেটা করে পরিষিস্থতি নিয়ন্ত্রনে করেন। এসময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. জয়নাল হাওলাদার, আওয়ামীলীগ নেতা হাবিব মাতুব্বর, পরাজিত প্রার্থী সোাহান হাওলাদার, ছাত্রলীগ কর্মি স্বপনসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। চাদশী ইউনিয়নের নরসিংহলপট্রি গ্রামে পরাজিত সদস্য প্রার্থী লালু সরদার অভিযোগ করেন, নির্বাচিত মো. রাসেল তার সমর্থকদের নিয়ে তার সমর্থক কবির সিকদার(৪০) ও শাহীন আকন(৩৫)কে কুপিয়ে জখম করেছে। গৌরনদী ্উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড দক্ষিণ পিঙ্গলাকাঠী (হাজ্বীপাড়া) গ্রামে পরাজিত সদস্য প্রার্থী জাকির হোসেন হাওলাদার অভিযোগ করেন, বুধবার সকাল আটটার দিকে বিজয়ী প্রার্থী বিএনপি নেতা আলীম হাওলাদার ও তার সমর্থক জামাল খন্দকারের নেতৃত্বে তাদের ৫০/৬০জন সমর্থকেরা সশস্ত্র অবস্থায় তার (জাকির) বসতঘরসহ চাচা জলিল হাওলাদারের ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুরসহ ব্যাপক লুটপাট করে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পাকুরিতা গ্রামের নিবাসী ও আ.লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী লাবন্য তালুকদারের সমর্থক দুলাল সেন (২২) অভিযোগ করেন, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনার পর আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ও নির্বাচিত চেয়ারম্যান বিপুল দাসের সমর্থক প্রেমতাজ জয়ধর(৪৫),বিরেন বিশ্বাস (৪২), লিটন বিশ্বাস(২২), রিপন বিশ্বাস(২৭)সহ ১৫/২০ জন সমর্থক লাঠিসোটা নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায় । এসময় হামলাকারীরা বাড়ি ভাঙচুর করে রতিকান্ত সেন(৬৫), তার স্ত্রী সুনেত্রা জয়ধর(৪৫)সহ ৫জনকে পিটিয়ে জখম করেছে।
একই ইউনিয়নে মঙ্গলবার গভীর রাতে বিজয়ী মেম্বার নির্মল বিশ্বাসের সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে পরাজিত প্রার্থী অমল জয়ধরের সমর্থক ভগিরথ বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় হামলাকারীরা ভগিরথের পরিবারের সদস্য রিংকু বিশ্বাস, ইতি বিশ্বাস, সবিতা বিশ্বাস, বিধান ও মুক্তি বিশ্বাসকে মারধর করে গুরুতর আহত করে।
এছাড়াও রাজিহারের গোয়াইল গ্রামে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় মিঠুন সিকদার, ফুল¬শ্রী গ্রামের রাশেদ ফকির, বাগধা গ্রামের কবিরউদ্দিন মিয়া, বারপাইকা গ্রামের উষা বিশ্বাস, ময়না বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, নগরবাড়ি গ্রামের হেলেনা বেগম, কুড়ালিয়া গ্রামের প্রভা বাড়ৈ, কান্দিরপাড় গ্রামের আসাদুল হাওলাদার, চেঙ্গুটিয়া গ্রামের জাহিদ ঘরামী, ভদ্রপাড়া গ্রামের শাহ আলম শিকদার, নাঘার গ্রামের দুলাল হালদার, হাবিব শিকদার, বাসনা রানী হালদার, পাকুরিতা গ্রামের গৌরাঙ্গ হালদার, নিতাই হালদার, পশ্চিম শাওড়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান, কোদালধোয়া গ্রামের জয়ন্ত, নারায়ন, নিতাই ও মনু হালদারসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। গুরুতর আহত ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতার এসব ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
উজিরপুর থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বরাকোঠা ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য মো. জামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী দেশীয় ধারাল অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী নান্নু বেপারীর নির্বাচন করার অপরাধে নান্নুর সমর্থক ইউনিয়ননের মালিকান্দা গ্রামের সোহাগ হাওলাদার(২৫)কে কুপিয়ে জখম করে। নান্নু বেপারী অভিযোগ করেন, সোহাগকে কুপিয়ে জখম করার প্রতিবাদে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে জামাল হোসেনসহ তার সহযোগীদের প্রতিরোধে করেন। কিছুক্ষন পর জামাল তার সমর্থকদের খবর দিয়ে দলভাড়ি করে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালিয়ে গ্রামের হারুন আর রশিদ, রব বেপারী, নুর মহাম্মদ, খালেক হাওলাদার, গিয়াস উদ্দিন, শ্যাম বেপারী ও আরিফ হোসেনসহ ১২টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়। গুরুতর সোহাগসহ ৩ জনকে উজিরপুরউপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বতির্ করা হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে জামাল হোসেন বলেন, হামলায় আমি বা আমার কোন সমর্থক জড়িত নাই।
গ্রামবাসী জানান, উজিরপুরের ওটরা ইউনিয়নের মশাং গ্রামে সদস্য পদে প্রার্থী হন শ্যামল চন্দ্র বালী ও হালিম খান। তারা দুই জনের কেউই নির্বাচিত হতে পারে নাই। ফলাফল ঘোষনার পর পরাজিত হওয়ার জন্য শ্যামলকে দায়ী রাত ৯টায় হালিম খান তার ৮/১০ জন সমর্থকদের নিয়ে শ্যামল বালীর বাড়িতে হামলা করে বাড়ি ভাঙচুর করেছে। শ্যামল অভিযোগ করে বলেন, হালিম খান বাড়িতে হামলা ভাঙচুরও লুট করে লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে গেছে এবং আমার কাজল বারী(৪৫), চাচী রুপসী বালী(৭০), বোন শিখা বালী(২৫)সহ ৫ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, কোন ঘটনায়ই কোন মামলা করতে কেউই আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।