গৌরনদী
টেন্ডার ও জমি অধিগ্রহন ছাড়াই ॥ গৌরনদীতে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ীর সামনের রাস্তা বর্ধিত করণ ॥ অর্ধশত পরিবারের বসতবাড়ি-ফসলী জমির মাটি ও গাছপালা কেটে সাবার
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ নিজ বসত বাড়ীর সামনের রাস্তা প্রশস্ত করার নামে জমি অধিগ্রহন না করে টেন্ডার ছাড়াই এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসতবাড়ী ও ফসলী জমির মাটি কর্তন এবং গাছ-পালা কেটে সাবার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউপির চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু’র বিরুদ্ধে। ওই ইউপি চেয়ারম্যান প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিপুল আয়তনের আবাদী জমির মাটি এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে অনেকটা খাল ও ডোবা তৈরি করে সেই মাটি ফেলেছেন ওই সড়কে। অকারণে সড়কের পাশের কারো ফলের বাগান, কারো পান বরজ, কারো বা বাঁশ বাগান কেটে সাবার করা হয়েছে। বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে কারো কারো। ইউপি চেয়ারম্যানের সম্পূর্ন খামখেয়ালীপনার কারণে সড়কটি বর্ধিত করণের কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এলাকাবাসী। অবশ্য, পিকলু এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন নিজের জন্য নয়, জনস্বার্থে রাস্তা বড় করা হচ্ছে।
সরে-জমিন ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু তার বসত বাড়ির সামনের রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য কয়েকদিন আগে এস্কেভেটার দিয়ে রাস্তার দু’পাশের জমি কেটে মাটি রাস্তায় ফেলেছেন। রাস্তার পাশের আ. রহিমের বাড়ির বাউন্ডারী দেয়াল গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের চাপের মুখে রাস্তার দু’পাশের বাসিন্দারা তাদের বাড়ির সামনের রাস্তার গাছ পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছেন।
রাস্তার পাশের বাসিন্দা পৌরসভার হরিসেনা এলাকার মো. সুলতান ডাক্তার অভিযোগ করে বলেন, পিকলু চেয়ারম্যান এস্কেভেটার দিয়ে রাস্তার পাশে আমার মালিকানাধীন আবাদী জমিতে খাল কেটে ওই মাটি রাস্তায় ফেলে রাস্তা বড় করেছেন। এতে বসত বাড়িসহ ১০ শতাংশ আবাদী জমি আমি হারিয়েছি। জমি অধিগ্রহন ছাড়া জোরপূর্বক আমার জমির মাটি কেটে রাস্তায় ফেলে রাস্তা বড় করে জমি দখল করায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছি। জমি হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা।
একই গ্রামের আয়নাল হক সরদার, জয়নাল সরদার, মো. শহিদুল বলেন, আমাদের বাড়ির জমি ও আবাদী জমি রক্ষার জন্য নিজেদের পুকুর থেকে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলে দিয়েছি। এতে আমাদের প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পিকলুর হুমকিতে নিজেদের টাকা খরচ করতে বাধ্য হয়েছি। বিল্বগ্রাম এলাকার হতদরিদ্র এস্কেন্দার সরদার জানান, রাস্তার পাশে আমার তিন শতাংশ আবাদী জমি ছিল। চেয়ারম্যান পিকলু জোরজুলুম করে এস্কেভেটার দিয়ে আমার জমির মাটি কেটে রাস্তায় ফেলে রাস্তা বড় করায় আমার এখন প্রায় এক শতাংশ’র মত জমি আছে।
হরিসেনা এলাকার আহম্দ তালুকদার, নুরু ফকির, মাজেদ ফকির, জব্বার ফকির, মিনারা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি ঘেষা রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করেছিলাম। রাস্তা বড় করতে হবে বলে চেয়ারম্যান আমাদের গাছ কাটার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। নিরুপায় হয়ে আমরা রাস্তার পাশের ছোট-বড় গাছ পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পি.এস (উপ-সচিব) মো.তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, পিকলু চেয়ারম্যান আমার ছোট ভাইকে চাপ সৃষ্টি করলে আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তার পাশের শতাধিক গাছ কেটে নিতে বাধ্য হয়। পিকলু এস্কেভেটার দিয়ে আমার বাড়ির জমির মাটি জোরপূর্বক কাটতে শুরু করলে বিষয়টি তাৎক্ষনিক গৌরনদীর ইউএনওকে অবহিত করলে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেন। ইউপি চেয়ারম্যান পিকলু আমার আত্মীয় স্বজনদের কাছে আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় । গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব আলম মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর সাথে মুঠো ফোনে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগগুলো সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, টিআর দ্বারা সড়কের বর্ধিতকরণ প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ চলছে। ব্যক্তি মালিকানাধীণ কোন জমির মাটি কাটা হয়নি। রাস্তার পাশের সরকারি খাস জমির মাটি কেটে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয় এলজিইডি অফিস সূত্রে জানাগেছে, গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠি পেট্রোল পাম্প থেকে বিল্বগ্রাম বাজার পর্যন্ত ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়কটির পাশে কোন খাস জমি নেই। গৌরনদী এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী মোঃ ফজল আহম্মেদ জানান, সরকারি ভাবে এ সড়কের প্রস্থ বর্ধিতকরণের পরিকল্পনা আপাতত নেই। তবে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে করলে আমাদের কিছু করার নেই বলে তিনি জানান।