গৌরনদী
গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর নির্বাচনী সহিংসতা শতাধিক আহত, তিনটি কেন্দ্র স্থগিত, প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশ অবরুদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার ইউপি নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে শতাধিক আহত হয়েছে। উজিরপুর ১টি ও অগৈলঝাড়া ২টি কেন্দ্র ভোট গ্রহন স্থগিত ও গৌরনদীতে ২টি কেন্দ্র ২ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর ভোট গ্রহন করা হয়। গৌরনদীর ১টি কেন্দ্রে পুলিশ আনছার ও প্রিজাইডিং অফিসারকে একঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে র্যাব পুলিশ ও বিজিপি ঘটনাস্তলে পৌছে পরিস্তিতি নিয়ন্ত্র আনেন। চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের বিরোধী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নে জামবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহনের আধা ঘন্টা পরে সকাল সাড়ে ৮টায় আ.লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ডাঃ হরেন রায়ের নেতৃত্বে ১০ টি মটর সাইকেল নিয়ে ৩০/৪০ জন সমর্থক জামবাড়ী কেন্দ্রে ঢুকে চেয়াম্যাদের ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সীল দেওয়া শুরু করে।
খবর পয়ে ওয়ার্কাস পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী বিমল চন্দ্র করাতীর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জড়ো হয়ে হরেন রায়ের সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। এ সময় ভোট কেন্দ্রের মধ্যে হরেন রায়কে এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং তার সমর্থকদের ৫টি মটর সাইকেল ভাঙচুর ও কেন্দ্রের ৩টি ব্যালট বাক্স ভাংচুর করেন। পরে বিজিবি, র্যাব, পুলিশের ষ্টাইকিং ফোর্স নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে উদ্ধার করে। প্রিজাইডিং অফিসার দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ঘটনার পর ওই কেন্দ্রটির নির্বাচন স্থগিত ঘোষনা করা হয়। । সংঘর্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী হরেন রায়, দুলাল মজুমদার(২৭), সুধাংশু রায়(৪৭), নরেশ বাড়ৈ(৩০), তাপস মল্লিক(৪০), মনোরঞ্জন মল্লিক(৪০), উত্তম ভাংরা(৪৫), বিমল বাড়ৈ(১৮), নির্মল বল্লভ(৪৫), হরেন মুড়ি(৪৫), ডাঃ আশুতোষ মল্লিক(৪০) ২০ জনসহ উভয় পক্ষের আহত হয়। গুরুত্বর আহত মনোরঞ্জন মল্লিককে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আ. লীগ প্রার্থী হরেন রায় কেন্দ্র দখল ও ব্যলটে সিল মারার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে আমার উপর বিমলও তার সমর্থকরা হামলা চালায়। উজিরপুরের বামরাইল ইউনিয়নের ভরসাকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টায় আ.লীগ প্রার্থী মো. ইউসুফ আলীর ২০/২৫ জনসমর্থক কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারা চেষ্টা করলে বিএনপির চেয়ারম্যানন প্রার্থী আ. মতিন নান্টুর সশর্তকরা প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। এসময় উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে বিএনপি কর্মি শাওন(২৪)ইউনুস(৩৫) ও আলাউদ্দিন (৩২৮)মহ ১০ জন আহত হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার শোলক ইউনিয়নের কচুয়া সঃ প্রাঃ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আ.লীগ ও বিএনপির সমর্থকদরে মধ্যে সংঘর্ষে সোহাগ(৩২), মাহমুদা(২৮)২৮ ৫ জন আহত হয়। এ সময় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আল-আমিন মিঞা সকাল ১০টায় কেন্দ্রটির ভোট গ্রহন বন্ধ ঘোষনা করেন।২ ঘন্টা পরে ১২টায় পূনরায় ঐ কেন্দ্রে ভোট গ্রহন শুরু করেন। বড়াকোঠা ইউনিয়ন ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টায় ধানের শীষ ও নৌকা প্রতিক সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ৯ রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ে। বাবরখানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, বড়াকোঠার দরগাবাড়ী কেন্দ্রে সংঘর্ষে হামলায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এনায়েত হোসেনসহ ১০ জন আহত হয়।
অগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আমবৌলা দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গ্রামে দুই মেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। এসময় ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহন স্থগিত করা হয়েছে। বাকাল ইউনিয়ননের আগৈলঝাড়া বি,এইচ,পি একাডেমী ভোট কেন্দ্রে মেম্বর প্রার্থী আশাদ খলিফা ও তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী মো. এসাহাক খলিফার সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কারনে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহন স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ভাল্লুকসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেনে্েদ্র মেম্বরপ্রার্থী অমিত হালদার ও অলি ফকিরের সমর্থকদের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. আইয়ুব আলী হাওলাদার জানান, পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে সকাল ১১টায় ভোট গ্রহন স্থগিত করা হয়। এক ঘন্টা পর পুলিশ র্যাব বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনে আনার পর দুপুর ১২টায় ভোট গ্রহন শুরুহয়।
গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ঢাকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বর প্রার্থীমোহাম্মদ হাওলাদার ও কুদ্দুস মাতুব্বরের সমথৃকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ লাঠিচাজর্ শুরু করেন। এসময় আ. লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নুর আলম সেরনিয়াবাদের সমথর্ক পুলিশের লাঠিপেটায় মারাত্মক জখম হনয়। এরজের ধরে নৌকার সমর্থকরা ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সকাল ১২টায় কেন্দ্রে হামলা করে পুলিশ আনসার, ভিডিপি, ও প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনে দায়িত্বে আসা কর্মকর্তাদের প্রায় দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্য রা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্তিতি শান্ত করে দুইটায় পুনরায় ভোট গ্রহন শুরু করেন। দকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা এ, এস, আই সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশের হামলায় হে আহত হয়নি। মাহিলাড়া ইউনিয়ননের শরিফবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুপুর দেড়টায় মেম্বর প্রার্থী মো. মিন্টু সিকদারের সমর্থক ও প্রতিদ্বন্ধী হারুন আর রশিদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়। এসকল ঘটনায় আহতদের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।