গৌরনদী
নির্বাচন পরিচালনার চাঁদা দাবির অভিযোগ ॥ গৌরনদীতে তালিকাভূক্ত অস্ত্র বিক্রেতা ও হত্যা মামলার আসামি প্রার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরকিল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ সর্বহারা সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য ও পুলিশের তালিকাভূক্ত অস্ত্র ব্যবসায়ী। অপরদিকে বার্থী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে প্রার্থী হয়েছে একটি হত্যা মামলা, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ কয়েকটি মামলার আসামি মো. নান্নু মৃধা। দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন পরিচালনায় চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আধুনা গ্রামের মো. তুজাম্মর আকনের পুত্র এককালের সর্বহারা গ্রুপের সদস্য মো. হারুন আর রশিদ আকন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরিকল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, হারুন অর রশিদ এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী । পুলিশ জানান, বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র আমদানি বিক্রি ও মজুদ করা দেশের ৪০৪ জনের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মো. হারুন আর রশিদ ওই তালিকাভূক্ত সদস্য। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরিশাল র্যাব নির্দেশনা পেয়ে অভিযান চালালে হারুন অর রশিদ আকন আত্মগোপন করেন। দীর্ঘ দিন পলাতক থাকার পর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান খান ও সিদ্দিক মোল্লা জানান, তারা হারুন আকনের পক্ষে নির্বাচনী কাজ না করায় তাদেরকে গত ১০ মার্চ প্রার্থী হারুন আর রশিদ ও তার ভাই পনির আকন মারধর করে গুরুতর আহত করে। আধুনা গ্রামের লক্ষন ঢুমরী, রাজ্জাক কবিরাজ, খালেক সরদার অভিযোগ করেন, নির্বাচনে হারুনের পক্ষে কাজ না করায় হারুন ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা তাদের প্রত্যেকের কাছে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করেছেন। নির্বাচনের পূর্বে দাবিকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ না করা হলে নির্বাচনের পরে দেশান্তরিত করা হবে বলে হুমকি হুমকি দেয়া হয়। অভিযোগ সম্পর্কে মো. হারুন অর রশিদ আকন বলেন, আমি কোন সর্বহারা-সন্ত্রাসী দলের সদস্য নই বা ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা। অস্ত্র ব্যবসায়ীর তালিকা থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই তালিকায় আমার নাম ছিল এ কথা সত্য একটি মহল ষরযন্ত্র করে আমার নামটি তালিকাভূক্ত করে।
অপরদিকে উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী হয়েছেন হত্যা, মাদক, সন্ত্রাসী মামলার ওয়ারেণ্টভ’ক্ত আসামি মো. নান্নু মৃধা। গ্রামবাসী জানান, একটি মাদক মামলায় সন্ত্রাসী নান্নুর বিপক্ষে স্বাক্ষী দেয়ার কারনে ২০১৪ সালে ১৬ অক্টোবর নান্নু মৃধার নেতৃত্বে তার বাহিনীর লোকজন পরিকল্পিতভাবে রাত সোয়া ৮টায় নন্দনপট্রি আকসা মসজিদের সামনে খাদেম সরদারকে কুপিয়ে হত্যা এবং তার পুত্র আসলাম সরদারকে গুরুতর জখম করে। ২০১৪ সালে গত ১ অক্টোবর ফেন্সিডিলের চালান আমদানীর খবর পেয়ে গৌরনদী থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এ এস আই) নুরুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে অভিযান চালালো নান্নু বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এ এস আই নুরুল ইসলামকে মারধর করে।
গত ২ মাস আগে সন্ত্রাসী নান্নু হাইকোর্ট থেকে খাদেম হত্যা মামলায় জামিনে আসেন এবং নির্বাচনে প্রার্থী হন। খাদেম হত্যা মামলার বাদি মো. শাহ আলম সরদার স্বাক্ষাী মো. নুর মহাম্মদ সরদার, মো. আসলাম সরদার, জসিম সরদার অভিযোগ করেন, মামলা দেয়ার অপরাধে নান্নু মৃধা তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, “তোদের জন্য আমি দীর্ঘ দিন জেল খেটেছি, অনেক টাকা পয়সা নষ্ট হয়েছে। বাঁচতে চাইলে আমাকে নির্বাচন করতে খরচ দে অন্যথায় কেউই বাঁচতে পারবি না”। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নান্নু মৃধার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার ( নান্নুর) মা রিজিয়া বেগম ছেলের বিরুদ্ধের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আগে মোর পোলায় মাদক বেচত এ্যাহন আর করে না, শত্রুরা মিথ্যা ছড়ায়”।
গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন মিলন জানান, নান্নু মৃধা বিরুদ্ধে হত্যা মাদক, সন্ত্রাসী, লুটসহ ১২টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে তার বিরদ্ধে খাদেম হত্যাসহ একাধিক ওয়ারেণ্ট রয়েছে। হারুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় সে অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশের তালিকাভ’ক্ত।