গৌরনদী
গৌরনদীতে স্কুলের সাড়ে তিন লক্ষ টাকার গাছ বিক্রি করে দিলেন আওয়ামীলীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের চন্দ্রহার কে,আর শিক্ষায়তন (চন্দ্রহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়)র মাঠের পাশের জমিতে থাকা সাড়ে তিন লক্ষ টাকার গাছ বিক্রি করে দিলেন বাটাজোর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য বিরেন চন্দ্র ঘরামী। গতকাল থেকে গাছ কেটে নেওয়া শুরু করেছেন গাছ ব্যবসায়ী ডায়ম- শেখ। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও বাটাজোর ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করলেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি বলে প্রধান শিক্ষক জানান।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯১৬ সালে স্থানীয় জমিদার কৈলাশ চন্দ্র ও রমেশ চন্দ্র পোনে ছয় একর জমি দান দান করে নিজেদের অর্থে প্রতিষ্ঠিত করেন চন্দ্রহার কে,আর শিক্ষায়তন (চন্দ্রহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়)। স্থনীয়রা জানান, এলাকার প্রভাবশালী দুই পক্ষের কোন্দলের কারনে গত ৭/৮ বছর যাবত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নেই। এ সুযোগে বিদ্যালয়ে পোনে ৬ একর সম্পত্তি থেকে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি দেড় একর সম্পত্তি জবর দখল করে নিয়ে ভোগ দখল করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকগন প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এলাকার গৌড়াঙ্গ চন্দ্র(৫০) মো. আজাহার উদ্দিন(৬৫)সহ অনেকেই জানান, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পশ্চিম পাশের চন্দ্রহার স্কুলের জমিতে ৩৫/৪০ বছর আগে স্কুলের উদ্যোগে গাছ লাগানো হয়। ওই গাছ বর্তমানে সম্পদে পরিনত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক জানান, বাটাজোর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য বিরেন চন্দ্র ঘরামী বিদ্যালয়ের জমিতে থাকা রেন্ট্রি, চাম্বল ও মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৭টি গাছ বিক্রি করে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল বেশ কিছু দিন ধরে বিদ্যালয়ের জমি দখল ও গাছ কেটে নেওয়ার পায়তারা চালায়। বিষয়টি টের পেয়ে আমি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করি। তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। তিনি আরো বলেন, সোমবার দুপুরে আমি এস,এস,সি পরীক্ষর ডিউটি শেষ করে স্কুলে ফিরে এসে দেখি ৮/১০ জন শ্রমিক স্কুলের গাছ কেটে নিচ্ছেন। তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব হাওলাদারেকে জানাই। তিনি এ বিষয়ে মেম্বরের (বিরেন চন্দ্র ঘরামী) সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, লেবার সর্দার শামীম হাওলাদার(২৮)র নেতৃত্বে শ্রমিক শ্রমিক স্বপন শিকদার(৩০),টিপু সুলতান(২৬),পলাশ বালী(৩২) ফরহাদ বালী(২৮),ছত্তার সরদার(২৫)সহ ১০/১২ জন বিদ্যালয়ের গাছ কাটছেন। এ সময় কেন গাছ কাটছেন তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, গাছ ব্যবসায়ী ডায়ম- শেখ ইউপি সদস্য বিরেন চন্দ্র ঘরামীর কাছ থেকে গাছ কিনেছেন। মোরা ডায়ম- শেখের ভাড়া করা শ্রমিক হিসেবে গাছ কাটছি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাছ ক্রয়ের কথা স্বীকার করে ব্যবসায়ী ডায়ম- বলেন, কত টাকায় কিনেছি তা বিরেন মেম্বরের কাছ থেকে জানতে পারবেন। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য বিরেন চন্দ্র ঘরামী বলেন, রাস্তা সম্প্র্রসারনের কাজ করতে চেয়ারম্যানের নির্দেশে গাছ কাটা হচ্ছে। সাড়ে তিন লক্ষ নয়, মাত্র ৫০ হাজার টাকায় গাছ বিক্রি করে ওই টাকা স্থানীয় মসজিদের উন্নয়নে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, গাছ নিয়ে স্কুল ও এলাকাবাসীর দ্বন্ধ রয়েছে তাই গাছ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করে মসজিদে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ,এন,ও) মো. মাহবুব আলম বলেন, বিষয়টি কখনোই আমাকে অবহিত করা হয়নি। লিখিত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনকরা হবে