গৌরনদী
ভয়াল ১৫ নভেম্বর ॥ ধ্বংশযজ্ঞের স্মৃতি চিহ্ন আজও ভুলেনি গৌরনদীর মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ আজ সেই ভয়াল ১৫ নভেম্ভর। ২০০৭ সালে সিডর নামক প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল গৌরনদীসহ উপকূলবর্তী ৩০টি জেলায় । লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল বরিশালের গৌরনদীকে। শতাব্দীর ভয়াবহ সেই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল গৌরনদীর ১৮ ও আগৈলঝাড়ার ১৪ টি তাঁজা প্রান।
সিডরের রাতে গৌরনদী যেন মৃত গৌরনদীতে পরিণত হয়েছিলো। রাত বারার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের তীব্রতার শব্দে সকল স্তব্ধতা ভন্ডুল করে দিয়েছিলো। পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে যখন ঘূর্ণিঝড় সিডরের মাতম শুরু করে ততক্ষণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে ভুতরে জনপদে পরিণত হয় গৌরনদীর পুরো এলাকা। রাত ৯ টার পর সম্পূর্ন যোগাযোগের বন্ধ হয়ে যায়্ । দুর্গম এলাকার গবাদি পশুগুলো প্রাণে রক্ষা পেতে ছোটাছুটি করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত যেন মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়েছিলো। শুধু গবাদি পশুই নয় সেদিন অসংখ্য বন্য প্রাণীও মারা গিয়েছিলো। রাত বাড়তে থাকার সাথে সাথে সিডরেরও তান্ডব বাড়তে থাকে। আতংকিত প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে নতুন ভোরের অপেক্ষায় থাকেন সবাই। কিন্তু অনেকেরই সেই সোনালী সকাল দেখার সৌভাগ্য হয়নি। নিজের জীবন ও প্রিয়জনকে নিয়ে যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তাদেরও খোয়া গেছে সকল সহয় সম্বল। সিডরের পরদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গৌরনদী ও দক্ষিণাঞ্চলে দেখা দেয় হাহাকার। লাশ খোঁজার পাশাপাশি খাবারের আশায় ত্রাণের সন্ধানে ছুঁটতে থাকেন ক্ষুধার্ত মানুষগুলো।
প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে সিথিঁর সিঁদুর মুছে যায় আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত রামানন্দেরআঁক গ্রামের মমতা বাড়ৈর। ঝড়ের রাতে প্রতিদিনের ন্যায় স্বামী, সন্তান নিয়ে তাদের ছোট্ট র্জীন কুটিরেই ঘুমিয়েছিলেন মমতা বাড়ৈ (২৪)। ঝড় চলাকালীন মাঝ রাতে ঘরের ওপর বিশাল আকৃতির একটি গাছ উপরে পরায় গাছের চাঁপা পরে মারা যায় গৃহকর্তা মমতার স্বামী দিনমজুর সুনীল বাড়ৈ (২৮)। একইদিন রাতে ঘরের ওপর গাছ চাঁপা পরে গৌরনদীর হরিসেনা গ্রামের দিনমজুর দুলাল সরদারের পুত্র স্বজল (৮) মারা যায়। ঝড়ের দিন মৃত স্বজল তার বোন সীমার কাছে ঘুমিয়েছিলো। ঝড় চলাকালীন বিশাল একটি গাছ তাদের ঘরের ওপর উপরে পরায় সীমা ও স্বজল গাছের নিচে চাঁপা পরে। এতে স্বজল ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গুরুতর আহত হয় সীমা। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম চাঁদশী গ্রামের মৃত সেকান্দার বেপারীর কন্যা কিশোরী ছালমার গর্ভে জন্মগ্রহন করেন একটি ফুট ফুটে পুত্র সন্তান। ঝড়ের রাতে ছালমাদের জীর্ণ কুটিরটি মুহুর্তের মধ্যে লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। ঠিক সে সময় প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকে কিশোরী মা ছালমা। ঝড় চলাকালীন সময়েই কিশোরী ছালমার গর্ভে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করে। ঝড় তুফানের রাতে জন্মগ্রহন করায় স্থানীয়রা ওই শিশুটির নাম রেখেছে তুফান। ভয়াবহ সে সব স্মৃতি মনে উঠলে এখনো আঁতকে ওঠেন সিডর আক্রান্ত জনপথের মানুষ।