গৌরনদী
অভিযোগ অর্থ বানিজ্যের ॥ ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বহিরাগত দল ছুটের হাতে ধানের শীষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ত্যাগী আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত চলমান আন্দোলনে নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে একজন বহিরাগতকে ভিন্ন দলের নেতাকে চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দলের তৃনমূল নেতা কর্মিরা। নেতা কর্মির অভিযোগ বার্থী ইউনিয়নে ধানের শীষের মনোনয়ন ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আ. মান্নান খান জানান, বিএনপির গৌরনদীর একটি শক্তিশালী বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এখানে বিএনপি ভোটার অধ্যুষিত এলাকা। বার্থী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের অসংখ্য যোগ্য ও ত্যাগী নেতা কর্মি ছিল যারা আন্দোলন সংগ্রামে পরিক্ষীত তাদেরকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য মনোনয়ন বোর্ড সুপারশি করে কিন্তু বোর্ডের সুপারিশকে পাশ কাটিয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন মিয়া কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে একজন বহিরাগত অন্য দলের নেতাকে ধানের শীষের মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আবুল হোসেন মিয়া বার্থী ইউনিয়নে দলের মনোনয়ন নিয়ে বানিজ্য করেছে।
বার্থী ইউনিয়ন বিএনপির ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন, ৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি মো. হারুন মোল্লা, ৬নং ওয়ার্ডের সভাপতি এসাহাক সন্যামাত, ৮নং ওয়ার্ডের সভাপতি কালাম গাজী, ৯নং ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক তোরাপ কাজী বলেন, নেতারা দলের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে ব্যাক্তি স্বার্থে ধানের শীষকে বহিরাগত বিএনপির কোন পদে নেই এমন এক নেতার হাতে তুলে দিয়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিতে অবহিত করে মনোনয়ন পরিবর্তনের আবেদন করেছি কিন্তু বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন মিয়া কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে তার বানিজ্যেক সিদ্বান্ত বহাল রেখেছেন। তারা জানান, ১০ লাখ টাকায় বিনিময় বিএনপির বার্থী ইউনিয়নের ধানের শীষ প্রতীক বহিরাগতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
বার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও টরকী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. শাহাবুব শরীফ জানান, বার্থী ইউনিয়নে বিএনপির অনেক যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছে। সেখানে তাদের বাদ দিয়ে অযোগ্য জনবিচ্ছিন্ন বহিরাগতকে ভিন্ন দলের নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যাহা মেনে নেওয়া যায় না। ব্যবসা করার করার অনেক সুযোগ আছে সেখানে রাজনীতির নামে কতিপয় নেতার মনোনয়ন বানিজ্য সাধারন নেতাকর্মিরা মেনে নিবে না।
বার্থী ইউনিয়ন বিএনিপর সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. আবুল কালাম খান (বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী) জানান, ৫ সদস্য মনোনয়ন বোর্ডের মধ্যে তাকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও বার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৪ সদস্য তার নামসুপারিশ করে রেজুলেশন কেন্দ্রে পাঠান কিন্তু গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন মিয়া কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে বহিরাগত পিপলসলীগের নেতার কাছে ধানের শীষ প্রতীক বিক্রি করেছে।
বার্থী ইউনিয়ন ও গৌরনদী উপজেলা বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মি মো. মনির সরদার, মোহাম্মদ মিয়া, আ. হক বেপারীসহ অনেকেই জানান, বার্থী ইউনিয়ন বিএনিপর সভাপতি আবুল কালাম খান জন্মলগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি গত ইউপি নির্বাচনে প্রদিদ্বন্ধীতা করে ১১২ ভোটে পরাজিত হন। তিনি (কালাম) বর্তমান সরকারের বিরদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে ১৭ মামলার এজাহারভ’ক্ত আসামি ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন। গত ২০ বছর ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে এলাকায় ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন অথচ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে পিপলসলীগের নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যারা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রভাবিত করে এ সিদ্বান্ত নিয়েছেন তারা দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দলের গোপন শত্রু।
ইউনিয়নের এলাকা ঘুরে নেতা, স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ পিপলসলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ঠিকাদার মো. আমিনুল হককে। বার্থী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্যাদা জানান, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের কুরকীরচর গ্রামের মো. সিরাজুল হকের পালক পুত্র আমিনুল হক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমিনুল হকের একাধিক মামাতো ভাই জানান, তার ফুফা সিরাজুল হক ছিলেন নি:সন্তান। তিনি মাদারীপুর জেলার শিবচর কৃষি ব্যাংকে চাকুরী করার সময় নবজাতক আমিনুল হককে পালক পুত্র গ্রহন করেন। পরবর্তিতে ১৯৮৪ সাল থেকে সিরাজুল হক পালক পুত্র আমিনুল হককে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গৌরনদীর বার্থীতে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয়রা জানান, আমিনুল হক দীর্ঘ দিন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ৪/৫ বছর আগে পিপলসলীগে যোগদান করেন। বর্তমানে সে ওই দলেই যুক্ত আছেন। বিএনপিরদলীয় সূত্র জানান, আমিনুল হক অদ্যবধি পর্যন্ত বিএনপিতে যোগদান করেননি।
বার্থী ইউনিয়নে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আমিনুল হক তার বরিদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, আমি পালক পুত্র কিংবা বহিরাগত নই। এই মাটিতেই আমার জন্ম। তিনি বিএনপিতে যোগদান করার কথা জানালেও যোদানের কোন কাগজপত্র দেখাকে পারেনি। অর্থ দিয়ে মনোনয়ন কেনার কথা অস্বীকার করে বলেন, অর্থ নয় যোগ্যতায় মনোনয়ন পেয়েছি। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা কমিটির আহবায়ক দাবিদার মো. আবুল হোসেন মিয়া বলেন, আমিনুল হক ৬/৭ বছর আগে বিএনপিতে যোগদান করেন। সে বহিরাগত নয় ওই ইউনিয়নের ভোটার বিধায় দলীয় যোগ্যতার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ১০ লাখ টাকা মনোনয়ন বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপিতে মনোনয়ন বিক্রির সুযোগ নেই। এটি মহল বিশেষের অপপ্রচার।