গৌরনদী
বিদেশ নামক সোনার হরিন ধরতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ গৌরনদীর ৩৮ যুবকের সন্ধান মিলেছে
জহুরুল ইসলাম জহির, গৌরনদী
বিদেশ নামক সোনার হরিন ধরতে গিয়ে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ বরিশালের গৌরনদীর ৩৮ যুবকের সন্ধান মিলেছে। তারা বর্তমানে লিবিয়ার জেলখানায় আটক আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মানব পাচার চক্রের সদস্য মোঃ জাকির হোসেন।
মানব পাচার চক্রের সদস্য মোঃ জাকির হোসেন বলেন, তারা ৭০জন বাংলাদেশীকে ইতালী নেওয়ার জন্য চুক্তি করে প্রতিজনের কাছ থেকে তারা ১৫ লক্ষ করে টাকা নেন। ইতালী যাওয়ার পথে লিবিয়ার উপকূল বেনগাজী থেকে গৌরনদীর ৩৮ যুবকসহ ৭০ জন বাংলাদেশীকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যার মধ্যে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ৩৮ জন ছাড়া আরও ১১ জন গৌরনদীর বাসিন্দা রয়েছেন। আটকদের মধ্যে বেশিরভাগ গৌরনদীর বার্থী ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লিবিয়ার কারাগারে থাকা অসংখ্য যুবকদের স্বজনরা জানান, মানব পাচার চক্রের সদস্য মোঃ জাকির হোসেনসহ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মাধ্যমে বরিশালের গৌরনদীর বিভিন্ন গ্রামের ৩৮ জন যুবক চলতি বছরের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে ওমরা হজ ভিসায় প্রথমে সৌদি আরবে নিয়ে যান। সেখান থেকে তারা দালাল সিন্ডিকেটের এজেন্টদের মাধ্যমে চোরাই পথে লিবিয়া যান। পরে ৬ সেপ্টেম্বর তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে জানতে পারেন ইতালী যাওয়ার পথে লিবিয়ার উপকূল বেনগাজী থেকে গৌরনদীর ৩৮ যুবকসহ ৭০ জন বাংলাদেশীকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ভূক্তভূগি পরিবার ও দালাল চক্রের সদস্রদের সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ নামক সোনার হরিন ধরতে গিয়ে গৌরনদীর প্রত্যেক যুবক তাদের সহায় সম্বল বিক্রিসহ ধার-দেনা করে ১৫ লাখ টাকা করে তুলে দিয়েছেন দালাল সিন্ডিকেটের হাতে। তারা সবাই অবৈধভাবে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার জন্য এ টাকা দেন। লিবিয়ার কারাগারে থাকা ৩৮ জন যুবকদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন- বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম, রহিম হাওলাদার, মো. অহিদুল হাওলাদার, সুজন খান, সবুজ মোল্লা, বড় দুলালী গ্রামের রাহুল সরদার, শাহ আলী বয়াতী, বাবুল বেপারী, তানভির হোসেন হৃদয়, মাসুদ তালুকদার, রাব্বী সরদার, রিয়াজুল বেপারী, বিপুল সরকার, শাহাদাত সিকদার, মো. রিমন মীর, তৌহিদ হাসান হৃদয়, উত্তর বাউরগাতী গ্রামের ফাহিম প্যাদা, ইব্রাহীম প্যাদা, শামিম সরদার, তাঁরাকুপি গ্রামের মুন্না বয়াতী, উত্তর মাদ্রা গ্রামের শান্ত দত্ত, বাঙ্গিলা গ্রামের সুমন কাজী, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের কামরুল বেপারী, ছোট ডুমুরিয়া গ্রামের মেহেদী হোসেন খান, পশ্চিম ডুমুরিয়ার বাবুল মোল্লা, পূর্ব সমরসিংহ গ্রামের আবুবক্কর মোল্লা, উত্তর মাগুরার সাদ্দাম বেপারী, আগৈলঝাড়ার আলী হোসেন বেপারী, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার সজিব বেপারী ও কালকিনির ফারহান হোসেন জয়। লিবিয়ায় আটক যুবক শাহদাতের মা সাফিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে বলেছিল মা জীবনে অনেক কষ্ট করেছ, আর কষ্ট করতে হবে না। আমি বিদেশ গিয়ে তোমাদের মুখে হাসি ফোটাবে, শান্তিতে রাখবো। এখন আমার বুকের মানিক কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। অনেক কষ্ট করে সহায় সম্বল বিক্রি করে সে স্বপ্নপূরণ করতে চেয়েছিল। আটক রিয়াজুল বেপারী নামে যুবকের বাবা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জাকির মোল্লার মাধ্যমে তার ছেলেকে ইতালি পাঠানো হয়েছে। এ জন্য জাকিরকে ১৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এসব টাকা ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যে, ইতালি যেতে হবে তা জানানো হয়নি। জাকির হোসেনের বোন তানিয়া আক্তার জানান, তার ভাই (জাকির) কাউকে জোর করে সেখানে নিয়ে যায়নি। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সবাই স্বেচ্ছায় গেছেন। যে কোনো উপায়ে সবাইকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন তার ভাই জাকির। গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যপারে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। শুনেছি গৌরনদীর ৩৮ যুবক প্রতারনার শিকার হয়ে গৌরনদীর ৩৮ যুবক লিবিয়ার কারাগারে রয়েছে। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


