গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় পুরানো পচা ইট দিয়ে ১০লক্ষ টাকার রাস্তা নির্মানের অভিযোগ
জহুরুল ইসলাম জহির, গৌরনদী
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের কদমবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ওয়াপদা সড়ক পর্যন্ত ৫শ মিটার সড়ক নির্মানের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহন করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা) প্রকল্প থেকে দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চন্দ্র দাসের অনুগত প্রকল্প কমিটির সদস্যরা পুরানো ও পচা ইট নিয়ে রাস্তা নির্মান করে প্রকল্পের অর্থ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসি।
স্থানীয় লোকজন, সুবিধাভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের কদমবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ওয়াপদা সড়ক পর্যন্ত ৫শ মিটার ইটের সোলিং রাস্তা নির্মানের জন্য ১০লক্ষ ৬শত ১২টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করেন । প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহসভাপতি বিকাশ মন্ডলকে প্রকল্প চেয়ারম্যান ও ওই ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি তাপস অধিকারীকে সাধারন সম্পাদকসহ ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়। জুন মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এখনো প্রকল্প কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের কদমবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ওয়াপদা সড়ক পর্যন্ত সড়ক নির্মান কাজ চলছে। সড়ক নির্মান কাজে নির্মান শ্রমিকরা ব্যবহার করেছেন পুরানো ও পচা ইট। এ সময় নির্মান শ্রমিক গৌড়াঙ্গ মন্ডল (৩৪)র কাছে পচা পুরানো ইট ব্যবহার করা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীরীগ নেতা বিপুল দাস, প্রকল্প চেয়ারম্যান বিকাশ মন্ডল ও প্রকল্প সাধারন সম্পাদক বিএনপি নেতা তাপস অধিকারীর নির্দেশে ও তাদের সরবারহকৃত ইট দ্বারা নির্মান কাজ করছি। এখানো আমাদের কিছুই করার নাই আমরা দিনমজুর মাত্র। কদমবাড়ি গ্রামের সুশীল বৈড়াগী (৪৫) আজাহার উদ্দিন (৪৩)সহ ভ’ক্তভোগী কয়েকজন সুবিধাভোগী ও এলাকাবাসি অভিযোগ করে বলেন, বাকাল ইউনিয়নের কদমবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ওয়াপদা সড়ক পর্যন্ত ৫শ মিটার ইটের সোলিং রাস্তা নির্মানে চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির করা হচ্ছে। রাস্তার ভীত নির্মানের বালুর ব্যবহার করার কথা থাকলেও কোন বালু দেওয়া হয় নাই। রাস্তায় ব্যবহৃত ইট বহু পুরানো ও পচা। ইট বসানো কাজেও ফাকা রাখা হচ্ছে। আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প চেয়ারম্যান ও কমিটির সদস্যরা রাস্তা নির্মানের নামে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করেছে। আমরা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। রাস্তায় চলাচলকারী সুবিধাভোগী আশিষ অধিকারী, ভ্যান চালক নুর আলম অভিযোগ করে বলেন, নির্মান ব্যপক অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে পুরানো ও পটা ইট দিয়ে নির্মান কাজ করা হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য বিকাশ মন্ডল বলেন, আমি নামে মাত্র প্রকল্প চেয়ারম্যান ইউপি চেয়ারম্যান যেভাবে ইট, বালু কিনতে বলে আমি সেভাবে কিনে দেই। মূলত প্রকল্প কাজ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল দাস। সে যে রকম নির্দেশনা দেন শ্রমিকরা সেভাবেই কাজ করেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সাধারন সম্পাদক ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি তাপস অধিকারী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস আমাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেণ । আমি এর চেয়ে বেশী কিচু জানি না। প্রকল্পের সকল দায় দায়িত্ব ইপি চেয়ারম্যানের।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা বিপুল দাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প কমিটি রয়েছে। আমি কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পুরানো ইট তুলে দিয়ে নতুন ইট দিয়ে রাস্তা নির্মান করা হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সোহেল হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে নির্মান কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করে নির্মান করলে কাজ করলে সকল দায় দায়িত্ব প্রকল্প কমিটিকে নিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিহা তানজিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্মান কাজ বন্ধ রাখার জন্য পিআইওকে বলা হয়েছে। মালঅমাল পরির্বনের পরে পরবর্তীতে নির্মান কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


