প্রধান সংবাদ
ভালবাসার প্রতিদান দিতে পারলাম না, চিরকুট লিখে বরিশাল মেডিকেল কলেজ ছাত্রের আত্মহত্যা
জহুরুল ইসলাম জহিরঃ “নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে আমি ক্লান্ত, একটু বিশ্রাম চাই, ক্ষমা করে দিও। এত ভালবাসার প্রতিদান দিতে আমি পারলাম না”। চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের মেধাবী ছাত্র (২৭) সজীব বাড়ৈ। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল গ্রামে। সজীব নিজে শরীরে নিজেই বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মারা যায়। সোমবার পারিবারিক শ্মশ্মানে সজীবের অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন, স্বজন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল গ্রামের দিনমজুর সুধীর বাড়ৈর তিন ছেলের মধ্যে মেঝ ছেলে সজীব। সে ছোট বেলা থেকে খুবই মেধাবী। ছেলেকে পড়াশোনা করানোর মত বাবা সুধীরের আর্থিক স্বচছলতা ছিল না। মেধাবী হওয়ার কারনে প্রতিবেশী, স্বচ্ছল স্বজন ও এলাকার বিত্তশালীদের আর্থিক সহযোগীতায় সজীবের পড়াশোনা চলছিল। সজীবের চাচাতো ভাই অমলেশ বাড়ৈ জানান, আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও সজীবের পড়াশোনা চালাতে কোন প্রভাব পড়েনি। স্বজন ও প্রতিবেশীরা চালিয়ে নিচ্ছিল। কি কারনে সজীব আত্মহত্যা করে তা স্পষ্ট না। তবে সহপাঠিদের দেয়া তথ্য মতে সজীব পড়াশোনার চাপে আত্মহত্যা করেছে। পড়াশোনার চাপে আত্মহত্যা করার বিষয়টি পরিবার মেনে নিতে পারছেন না বলেও চাচাতো ভাই অমলেশ জানান।
নিহত সজীবের ঘনিষ্ট সহপাঠি ও রুমমেট সুমন হালদার বলেন, বন্ধু সজীব বাড়ৈ পড়াশুনার অতিরিক্ত চাপ সামলাতে না পেরে নিজের শরীরে নিজেই ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেছে । পড়াশুনার অতিরিক্ত চাপ সামলাতে না পেরে সজীব প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। সে তৃতীয় বর্ষের মাইক্রোবায়োলজিতে আটকে ছিল। তার সাথের শিক্ষার্থীরা সবাই এমবিবিএস পাশ করে ইন্টার্নশিপ করছে। ক্লাস, এক্সামে সজীব খুবই ভয় পেত। যে কারণে গত ২২ মে দিবাগত রাতে সজীব ক্লোনাজিপাম ও ফ্লুক্সেটিন গুড়া করে শিরা দিয়ে পুশ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আমরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে প্রথমে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ২৪ মে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করি । চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সজীব বাড়ৈ মারা যান। তিনি আরও বলেন, (সুমন হালদার) সজীব বাড়ৈ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের ৫০তম ব্যাচের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলো। মারা যাওয়ার আগে সজীব একটি চিরকুটে লিখে গেছেন, “নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে আমি ক্লান্ত, একটু বিশ্রাম চাই, ক্ষমা করে দিও। এত ভালবাসার প্রতিদান দিতে আমি পারলাম না”। রোববার উপজেলার বাকাল গ্রামের পারিবারিক শশ্মানে সজীবের অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে ওই পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এব্যাপারে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার বলেন, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে সজীব কিছুদিন আগে শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মুমূর্ষ অবস্থায় সজীব বাড়ৈকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিলো। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।