গৌরনদী
গৌরনদীতে তালাবদ্ধ ইউনিয়ন পরিষদ খুলে দিলেন ইউএনও
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারনের দাবিতে মঙ্গলবার সকালে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মিরা বিক্ষোভ মিছিল ও ইউএনও কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে । বুধবার গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)র হস্তক্ষেপে তালাবদ্ধ সকল ইউনিয়ন পরিষদ খুলে দেওয়া হয়েছে।
সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা বলেন, মঙ্গলবার শত শত লোকজন এসে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিস থেকে বের করে তালাবদ্ধ করে দেন। বিষয়টি গৌরনদী উপজেলা ইউএনওকে জানালে তিনি তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কর্মচারীরা স্বভাবিকভাবে অফিস কার্যক্রম চালালেও আমি নিরাপত্তার কারনে পরিষদে যাইনি। খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোঃ নুর আলম সেরনিয়াবাত বলেন, বুধবার সকালে প্রশাসনের সহযোগীতায় ও বিএনপির একটিং অংশের হস্তক্ষেপে তালা কুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম চললে আমি পরিষদে যাইনি। বার্থী ইউনিয়ন পরিসদের চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্থীর এক ইউপি সদস্য বলেন, প্রশাসনের উদ্যোগে পরিষদ খুলে দিলেও ভয়ে ও আতংকের কারনে চেয়ারম্যান- মেম্বররা অফিসে যান না। মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসন খুলে দিলেও আতংকের কারনে কেই পরিষদে আসছেন না। পরিষদে হামলা ও তালাবদ্ধ করে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারনের ও বিক্ষোভের উদ্যাক্তা ও জেলা বিএনপির সদস্য এস, এম, মনিরুজ্জামান বলেন, চেয়ারম্যানদের অপসারন চেয়ে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশে ও স্মরকলিপি দিয়েছে কিন্তু পরিষদে তালাবদ্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে আমরা জড়িত না। দেশে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন থেকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী ও ইউপি চেয়ারম্যান নিজেরাই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ইমোশনাল ব্লাক মেইল করার জন্য নিজেদের ভাড়াটে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেওয়ার ঘটনার সাথে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত নাই। জেলা বিএনপির সদস্য ও চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তাইফুর রহমান কচি বলেন, চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতা হত্যার মামলা থাকায় সে আত্মগোপনে রয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মিরা জানান, গত ৫ আগষ্টের পরে গত ৯মাস ধরে উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পালিয়ে যাওয়ার কারনে ওই পদটি শুন্য ঘোষনা করে গৌরনদী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ দেন কর্তৃপক্ষ। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম সেরনিয়াবাত, আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, সৈকত গুহ পিকলু, আব্দুর রব হাওলাদার, মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা ও গোলাম হাফি মৃধা বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এলাকায় সন্ত্রাস চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতাকর্মির বাড়িতে হামলা ভাঙচুরসহ রামরাজত্ব কায়েম করেছিল। বর্তমানে এলাকায় থেকে আওয়ামী লীগকে সু সংগঠিত করা ও নাশকতার পরিকল্পনা করে আসছে। মঙ্গলবার সকালে গৌরনদী উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মিরা গৌরনদী বাসষ্টান্ড থেকে বিক্ষোভ মিছিল ইউএনও কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে করেন। সমাবেশে শেষ হওয়ার পর থেকে ৬ ইউনিয়নে বিক্ষুব্ধরা হামলা চালিয়ে তালাবদ্ধ করেন। এ বিষয় গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আরা মৌরি বলেন, তালাবদ্ধ পরিষদ খুলে দেওয়াসহ ইতোমধ্যেই সকল ইউনিয়ন পরিষদে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মি ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারন চেয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে তালাবদ্ধ করা ও সরকারি স্থাপনায় হামলা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে গন্য করা হবে। ঘটনার তদন্ত করে পরিষদে হামলার সত্যতা পাওয়া গেলে ঘটনায় জতিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।