গৌরনদীতে সাত ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারনের দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ ও  পরিষদে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারনের দাবিতে মঙ্গলবার সকালে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মিরা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে ইউএনও কার্যালয়ের সামবে সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ সমাবেশ  শেষে বিক্ষুব্ধরা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগষ্টের পরে গত ৯মাস ধরে উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পালিয়ে যাওয়ার কারনে ওই পদটি শুন্য ঘোষনা করে গৌরনদী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ দেন কর্তৃপক্ষ। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম সেরনিয়াবাত, বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, বার্থী  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলু, বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি  আব্দুর রব  হাওলাদার, সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান,  উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা ও নলচিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাফি মৃধা বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করে আসছিল।

বিএনপি নেতাকর্মির অভিযোগ, ওই ৭ ইউপি চেয়ারম্যান ফ্যাসিষ্টের সহযোগী হিসেবে এলাকায় সন্ত্রাস চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতাকর্মির বাড়িতে হামলা ভাঙচুরসহ রামরাজত্ব কায়েম করেছিল। বর্তমানে এলাকায় থেকে আওয়ামী লীগকে সু সংগঠিত করা ও নাশকতার পরিকল্পনা করে আসছে। তাই ৬ ইউপি চেয়ারম্যানকে অপসারনরে দাবিতে বিএনপি কর্মসূচী ঘোষনা করেন। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে গৌরনদী উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মিরা গৌরনদী বাসষ্টান্ড থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সদস্য এস,এম, মনিরুজ্জামান, মোঃ মঞ্জুর হোসেন মিলন, তাইফুর রহমান কচি, হোসনে আরা বেবী, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন, বরিশাল জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মাসুদ হাসান মিঠু, এস, এম. গফুর ও উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মোঃ রুবেল গোমস্তা, পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক মোঃ রাসেল হাওলাদার, উপজেলা স্বেচ্ছসেবক দলের  সাধারন সম্পাদক মোঃ জাফর খান প্রমূখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোল্লা মো. মাহফুজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ সচিব অভিযোগ করে বলেন, দুপুর ১২টার পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন পরিষদে তালা বদ্ধ করে দেন। সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যক্তা মোঃ রোকন উদ্দিন সরদার  জানান, সকাল আনুমানিক ১১ ঘটিকায় অফিসের কার্যক্রম চলাকালীন সময় ২ থেকে ৩ শত লোকজন মটর সাইকেলে  অটোরিকশা ও টমটম যোগে ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করে পরিষদের চেয়ারম্যানের রুম সহ একাধিক অফিস কক্ষে তালা বদ্ধ করে দেন।  কর্মকর্তা কর্মচারীদের অফিস থেকে বের করে দেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান,  উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা পরিষদে তালাবদ্ধ করার জন্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বরিশাল জেলা বিএনপির সদস্য মোঃ মঞ্জুর হোসেন মিলনকে দায়ী করে বলেন, আমি পরিষদে যাচ্ছিলাম পথিমধ্যে খবর পেয়ে পরিষদে না গিয়ে ইউএনও র সঙ্গে কথা বলে বাড়িতে ফিরে গেছি। বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রব হাওলাদার বলেন,  আজকে (মঙ্গলবার) আমি পরিষদে যাইনি তাই কি হয়েছে বলতে পারবো না। মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলুকে ফোন দিলে দুটি ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ঘনিষ্টজন জানান, মালিাড়া ইউনিয়ন পরিসদের কয়েকদিন আগেই চেয়ারম্যানের উপর হামলা চালিয়ে পরিষদে তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম সেরনিয়াবাত বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে পরিষদে বিএনপি নেতাকর্মিরারা তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। বিএনপি নেতা মঞ্জুর হোসেন মিলন সরিকল ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পরিষদে তালাবদ্ধ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। শুনেছি ফ্যাসিষ্টের সহযোগী বিনা  ভোটে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারনের দাবিতে সকল পরিষদে বিক্ষুব্ধ জনতা তালাবদ্ধ করে দিয়েছে।  এ বিষয় গৌরনদী উপজেলা  নির্বাহী কর্মকর্তা  (ইউএনও)  রিফাত আরা মৌরির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মি ইউপি  চেয়ারম্যানদের অপসারন চেয়ে  স্মারকলিপি দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদে তালাবদ্ধ করার অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি স্থাপনায় হামলা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে গন্য করা হবে। ঘটনার তদন্ত করে কোন পরিষদে হামলার সত্যতা পাওয়া গেলে ঘটনায় জতিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার বিকেলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তালাবদ্ধ ইউনিয়ন পরিষদ খুলে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ।