গৌরনদী
মনির কথাই সত্যি হল ॥ গৌরনদীতে হুমকিতে হত্যার মামলা বাদির মৃত্যু, নতুন বাদিকে একই হুমকি
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ যৌতুকের দাবি পুরন না করা ও স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় দাম্পত্র কলহকে কেন্দ্র করে নির্যাতনের ও স্বাসরোধ করে স্ত্রীকে হত্যা করে পাষ- স্বামী। মামলা প্রত্যাহারে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হত্যার হুমকিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাদি। পরবর্তিতে নিহতের বড় বোন বাদি হন। একই ভাবে মামলা প্রত্যাহারে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হত্যার হুমকি দিচ্ছে স্বামী ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। গতকাল শনিবার সকালে স্থানীয় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ গ্রহনসহ পরিবারে নিরাপত্তার দাবি জানিছেন হত্যা মামলার বাদি শাহনাজ বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের বড় বোন শাহনাজ বেগম। তিনি জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চন্দ্রহার গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী হাওলাদারের পুত্র উত্তরা ব্যাংকের গাড়ীচালক ইসমাইল হাওলাদার(৪৫) পূর্বের বিয়ের তথ্য গোপন করে একই উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের লক্ষনকাঠী গ্রামের দিনমুজর শাহজাহান আকনের কনিষ্ঠ কন্যা মনি আক্তার (২৮)কে ২০১৪ সনে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে কিছুদিন যেতে না যেতে স্বামী ইসমাইল বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে ২ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। স্ত্রী মনি বাবার কাছ থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করায় তাকে মারধর শুরু করেন। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য কলহ হয়। পরে গ্রাম্য সালিসদের মাধ্যমে মিমাংসার পর ২০১৫ সালে ইসমাইল হাওলাদার মনিকে নিয়ে ঢাকায় এসে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার আজিজুল পেসকারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তাদের সিয়াম নামে নয় মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
শাহনাজ বেগম(৩৫) অভিযোগ করেন, ঢাকায় বাসা নেওয়ার পরে মোহাম্মদ ইসমাইল অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। যৌতুক দাবিসহ এ নিয়ে প্রায়ই তার বোনের সঙ্গে ঝগরা বিবাদ হত এবং বোনকে মারধর করত। গত ৫ জুন ছোট বোন মনি তাকে মুঠোফোনে বলেছিলে আপা তোরা আমাকে নিয়ে যা নতুবা ও (স্বামী) আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচতে দিবে না। মনির কথাই সত্যি হল।
গত ১১ জুন সকাল সাড়ে ১১টায় বোন জামাই মোহাম্মদ ইসমাইল স্ত্রী মনিকে নির্যাতন করে এক পর্যায়ে শ্বামরোধ করে হত্যা করার পর বাবা শাজাহান আকনকে মুঠোফোনে জানান মেয়ে মনি হার্ড এ্যাটাক করে (হৃদরোগে) মারা গেছে। স্বামী ইসমাইল বিষয়টি পুলিশকে অবহিত না তরিঘডি করে নিজ বাড়ি গৌরনদীর চন্দ্রহার গ্রামে এসে লাশ দাফনের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে নিহত মনির স্বজনরা গৌরনদী মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে পুলিশ ফতুল্লা থানাকে বিস্তারিত জানিয়ে স্বামী মোহাম্মদ ইসমাইলকে আটক করে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে পাঠান। ১৪ জুন নিহতের পিতা শাহজাহান আকন বাদি হয়ে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আসামি মোহাম্মদ ইসমাইল চলতি মাসে জামিনে ছাড়া পেয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের বাদি শাহজাহান আকনের বাড়িতে পাঠান। সন্ত্রাসীরা মামলা প্রত্যাহারে বিভিন্নভয়ভীতি দেখিয়ে শাহজাহানকে হত্যার হুমকি দেন। হুমকির মুখে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাদি শাহজাহান আকন হৃনযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। পরবর্তিতে মামলার বাদি হন নিহত মনির বড় বোন শাহনাজ বেগম।
শাহনাজ বেগম বলেন, আমার বোনের হত্যাকারী বোন জামাই মোহাম্মদ ইসমাইল বোনের পর আমার বাবাকে হত্যা করেছে এখন মামলা প্রত্যাহারে আমাকে ভয়ভীতি দেখান। মামলা তুলে না নিলে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। প্রায়ই সন্ত্রাসীদের বাড়ি পাঠিয়ে এবং মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে আমাকে বলেন, কথামত না চললে বোনের ও বাবার পথ ধরে তোকেও মরতে হবে। বর্তমানে সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে আমি সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাটাজোর ইউনিয়ন পরিসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য রেখা বেগম, মুক্তিযোদ্ধা মো. হাফিজুল ইসলাম, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপজেলা সমন্বয়কারী আ. কাদেরসহ নিহতের স্বজনরা।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইসমাইলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এস, আই) মাসুদ রানা বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। বাদিকে হুমকি দেয়ার বিষয় সম্পর্কে আমি অবহিত নই।