গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় নিন্মবংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করার অপরাধে মৃত মায়ের লাশ সৎকারে বাঁধা ব্রাহ্মনদের
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে সাগর চক্রবর্তী প্রেম করে বিয়ে করেন নিন্ম বংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মেয়ে টুম্পা হালদারকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাগর চক্রবর্তীর মা মারা যান। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে সাগর নিন্ম বংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করায় অপরাধে সাগরের মৃত মায়ের সৎকারে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজনের বাধার কারনে গত ২৪ ঘন্টা পার হলেও সৎকার হয়নি মায়ের। বিষয়টি নিয়ে এলঅকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন, নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল গ্রামের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের পুরোহিত দুলাল চক্রবর্তীর ছেলে সাগর চক্রবর্তী গত ১০বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে বিয়ে করেন একই উপজেলার কোদালধোয়া গ্রামের বিমল হালদারের নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের মেয়ে টুম্পা হালদারকে। প্রেমের বিয়ে দুই পরিবার মেনে নিলেও সনাতন ধর্মীয় উচ্চ বংশ ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে নিন্ম বংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করায় বিপত্তি বাঁধে গ্রামের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজনসহ স্বজনরা। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সাগর চক্রবর্তির স্বজনরা একমত হয়ে গত ১০ বছর ধরে সাগর চক্রবর্তির পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সাগর চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে তার মা অলোকা চক্রবর্তী মারা যায়। এ সময় আমরা পরিবারের সদস্যরা মায়ের লাশ সৎকারের উদ্যোগ নিলে ব্রাহ্মণ ছেলে হয়ে নমঃশূদ্রের মেয়ে বিয়ে করার অপলাধে মায়ের মরদেহের অন্তষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাধা দেন আমার জ্যাঠাসহ ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন । সাগর চক্রবর্তী াভিযোগ করে বলেন, নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের লোকজন মায়ের মরদেহের অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসলেও অনুমতি দেয়নি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন। লাশ সৎকার করতে না দেয়ায় গত ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও শনিবার পর্যন্ত মায়ের মরদেহ নিয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে মা অলোকা চক্রবর্তীর লাশ। লাশের পাশে বসে বিলাপ করে কান্নাকাটি করছে মৃত অলোকা চক্রবর্তীর মেয়ে দীপাঞ্জলী চক্রবর্তী, পর্না চক্রবর্তী ও ছেলে সাগর চক্রবর্তী। এ সময় তারা বলেন, আমার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ স্বজনসহ গ্রামের সবাইকে জানিয়েছিকিন্তু বাড়ির দুই একজন দেখতে আসলেও সৎকারের উদ্যোগ নেননি এবং বাধা প্রদান করেন। স্থানীয় অশোক বল্লভ, আকাশ রায় অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান যুগে বর্ণাপ্রথা একটি কুসংস্কার হলেও সাগরের মায়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমরা তার মরদেহ সৎকারের জন্য এগিয়ে আসি কিন্তু নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় আমাদের মরদেহের অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুমতি দেয়নি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন। অভিযোগের ব্যাপারে ব্রাহ্মণ পংকজ চক্রবর্তীর স্ত্রী শুক্লা চক্রবর্তী বলেন, ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে একই ধর্মের নিন্ম বংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করায় ধর্মীয় রীতিনীতি লংঘন করেছে যে কারনে আমাদের কেউ সৎকারে যায়নি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের নেতা ভবতোষ চক্রবর্তি সহ কোন পুরোহিত কথা বলতে রাজি হননি। আগৈলঝাড়া ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় সমিতির সভাপতি পরিমল চক্রবর্তীকে ফোন দিলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ছেলে জানায় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে একই ধর্মের নিন্ম বংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করা অপরাধ ও ধর্মীয় রীতিনীতি লংঘন। এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. অলিউল ইসলাম বলেন, এধরনের কোন ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। খোজ নিয়ে লাশ সৎকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো।