গৌরনদী
উজিরপুরে দুই আওয়ামীলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার তিন দিন পরে ৩৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রæতার জের ধরে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদার (৪৬) ও তার এক সহযোগী আপন চাচাতো ভাই ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সাগর হাওলাদারকে (২৮) কুপিয়ে হত্যার ঘটনার তিন দিন পর সোমবার গভীর রাতে (১১-৪৫মিনিট) নিহত ইদ্রিস হাওলাদারের স্ত্রী রেশমা বেগম (৩৬) বাদি হয়ে সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ কিবরিয়া হাওলাদারকে (৩৮) প্রধান আসামি ও ২৬জনের নামউল্লেখসহ ৩৮ জনকে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মঙ্গলবার এজাহারনামীয় আসামি কবির বিশ্বাস (৩৫) এক আওয়ামীলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার অধিকাংশ আসামিরা স্থানীয় আওয়ামীলীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের অনুসারী।
হত্যা মামলার আসামিরা হলেন, উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শাহিন হাওলাদার (৪৮), তার চাচাতো ভাই উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ হাওলাদার (৪৬), সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ কিবরিয়া হাওলাদার (৩৮), সাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস হাওলাদার (৫৪), সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের প্রচার সম্পাদক মোঃ কবির বিশ্বাস (৩৫), ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য সোহেল হাওলাদার (৪২)সহ ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২জন আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদি নিহত আওয়ামীলীগ নেতা ইদ্রিস হাওলাদারের স্ত্রী এজাহারে উল্লেখ করেন, তার স্বামী নিহত ইদ্রিস হাওলাদার (৪৬) ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চাচাতো ভাই ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য সাগর হাওলাদারের (২৮) মটরসাইকেল যোগে নিজ বাড়ি আসার পথে রাত পোনে ১১টার দিকে সাতলা পশ্চিমপাড় ব্রিজের ঢালে পৌছলে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শাহিন হাওলাদারের নেতৃত্বে তার সহযোগী তার চাচাতো ভাই উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ হাওলাদার (৪৬) সন্ত্রাসী ইলিয়াস হাওলাদার (৫৪) সোহেল হাওলাদার(৪২), কবির বিশ্বাস (৩৫) সহ ৩৫/৩৮ জন সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে মটরসাইকেলে গতিরোধ করে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই ইদ্রিস হাওলাদারকে হত্যা করেছে। মটরসাইকেল চালক দেবর সাগর হাওলাদাকে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ১০টায় সাগর মারা যান।
স্থানীয় লোকজন, নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রæতার জের ধরে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে একই গ্রামের সাতলা বাজারের ব্যবসায়ী ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদারের চরম বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে একাধিকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। গত ১৭ মার্চ ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের নেতৃত্বে তার ৫০/৬০ জন সহযোগী ইদ্রিস হাওলাদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করেছিল। এ ঘটনায় ইদ্রিস হাওলাদার একাধিক মামলা করলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও তার চাচাতো ভাই উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ হাওলাদার গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটে জামিনে বের হয়ে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে হত্যাকান্ড চালায়।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও তার চাচাতো ভাই যুবলীগ নেতা আসাদ হাওলাদারকে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মুঠোফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে। উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মোঃ তৌহীদুজ্জামান বলেন, মাছের ঘেরসহ ব্যবসায়ীক ও এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে ইদ্রিস হাওলাদার ও সাগর হাওলাদার কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় নিহত ইদ্রিস হাওলাদারের স্ত্রী রেশমা বেগম (৩৬) বাদি হয়ে সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ কিবরিয়া হাওলাদারকে (৩৮) প্রধান আসামি ও ২৬ জনের নামউল্লেখসহ ৩৮ জনকে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।