গৌরনদী
উজিরপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগ নেতার হামলায় দুই আওয়ামীলীগ নেতা নিহত
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শাহিন হাওলাদারের (৪৮) নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে শনিবার গভীর রাতে সাতলা বাজারের ব্যবসায়ী ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদার (৪৬) ও তার এক সহযোগী আপন চাচাতো ভাই ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সাগর হাওলাদারকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওযা গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয় লোকজন, নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রæতার জের ধরে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে একই গ্রামের সাতলা বাজারের ব্যবসায়ী ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদারের চরম বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে একাধিকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। গত ১৭ মার্চ ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের নেতৃত্বে তার ৫০/৬০ জন সহযোগী ইদ্রিস হাওলাদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করেছিল। এ ঘটনায় ইদ্রিস হাওলাদার একাধিক মামলা করলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও তার চাচাতো ভাই উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ হাওলাদার গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটে বের হন। এতে প্রতিহিংসা আরো বেড়ে যায়।
নিহত আওয়ামীলীগ নেতা ইদ্রিস হাওলাদারের চাচাতো ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম রোববার সকালে নিহত সাগর হাওলাদারের বরাত দিয়ে জানান, নিহত ইদ্রিস হাওলাদার (৪৬) ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চাচাতো ভাই ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য সাগর হাওলাদারের (২৮) মটরসাইকেল যোগে নিজ বাড়ি যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। রাত পোনে ১১টার দিকে পথিমধ্যে সাতলা পশ্চিমপাড় ব্রিজের ঢালে পৌছলে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শাহিন হাওলাদারের নেতৃত্বে তার সহযোগী তার চাচাতো ভাই উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ হাওলাদার (৪৬) সন্ত্রাসী ইলিয়াস হাওলাদার (৫৪) সোহেল হাওলাদার (৪২)সহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে মটরসাইকেলে গতিরোধ করে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই ইদ্রিস হাওলাদারকে হত্যা করেছে। মটরসাইকেল চালক চাচাতো ভাই সাগর হাওলাদাকে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা আহত সাগর হাওলাদারকে উদ্ধার করে প্রথমে আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরবর্তিতে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ১০টার দিকে মারা যান। তিনি (রবিউল ইসলাম) বলেন, আহত সাগর হাওলাদার চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় হামলাকারীদের নামসহ পুরো ঘটনা বলে যান। নিহত ইদ্রিস হাওলাদার স্ত্রী রেশমা বেগম (৩৬) অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসী ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও তার ভাই আসাদ হাওলাদার এর আগেও একাধিকবার আমার স্বামীকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যবর্থ হন। গত মার্চ মাসে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করে কয়েক লক্ষ টাকার ঘেরের মাছ লুট করে নিয়ে যায়। মামলা করার কারনে জেল খেটে বের হয়ে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে স্বামী ও দেবরকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও তার চাচাতো ভাই যুবলীগ নেতা আসাদ হাওলাদারকে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মুঠোফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জাফর আহম্মেদ বলেন, মাছের ঘেরসহ ব্যবসায়ীক ও এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র বিরোধের জের ধরে ইদ্রিস হাওলাদার ও সাগর হাওলাদার নিহত হয়েছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।