গৌরনদী
গৌরনদীতে আওয়ামীলীগের দু পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা, আসামি শতাধিক নেতাকর্মি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে বাটাজোর বাসষ্টান্ডে আওয়ামীলীগ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার গৌরনদী মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই মামলায় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মিকে আসামি করা হয়েছে। আহত উপজেলা যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ও আহত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহর মা বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এদিকে আহত সৈকত গুহ ও তার সহযোগী পলাশ হাওলাদারের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তাকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত দেলোয়ার বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
হারিছুর রহমানের সমর্থক আহত যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী আফরোজ আক্তার ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ, তার ছোট ভাই কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক সলিল গুহ, গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলেিগর সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ খোকন মল্লিক, আওয়ামীলীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন, ৩নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আল আমিন হাওলাদার, ৭ং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সির ও পৌর যুবলীগের সহসভাপতি মোঃ ইখতিয়ার হোসেন। ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহর মা তাপসি রানী গুহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নেতা দেলোয়ার হোসেন তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ মাহমুদ, বাটাজোর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক কালু তালুকদার।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মিয়া তার সমর্থক মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈকত গুহসহ ১০/১৫ জনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাটাজোর বাসষ্টান্ডে গনসংযোগে আসেন। এ সময় ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে আরেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ হারিছুর রহমানের সমর্থক গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোঃ দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার ও তার সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি পরবর্তিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মোঃ মনির মিয়া অভিযোগ করেন বলেন, হারিছুর রহমানের সমর্থক যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে বাটাজোর বাসষ্টান্ডে মহড়া দিতে থাকে। আমরা গনসংযোগ শুরু করলে হামলা চালিয়ে সৈকত গুহ, সমর্থক পলাশ হাওলাদার (২৭) ও মামুন খানকে (৩২) কুপিয়ে রক্তাক্তভাবে জখম করে। সৈকত গুহ অভিযোগ করে বলেন, হারিছুর রহমানের সন্ত্রাসী বাহিনী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেন। আমি বিষয়টি টের পেয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসিকে ফোনে অবহিত করে তার সাহায্য চাই কিন্তু পুলিশ পাঠাতে বিলম্ব করায় হারিছুরের ক্যাডার দেলোয়ার হোসেনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে। এ সময় আমার সহযোগী পলাশ হাওলাদার ও মানুম খানকে কুপিয়ে জখম করে একটি ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে। গৌরনদী থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ সহিদুল ইসলাম পুলিশ নিয়ে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। আমার উপর হামলার খবর পেয়ে আমার মা তাপসি রানী গুহ স্ত্রী বিপাশা গুহ ও ছোট ভাই সলিল গুহ গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌছলে তাদের মারধর করা হয়। এ অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক ও বাটাজোর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক কালু তালুকদার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ দেলোয়ার হোসেনকে লক্ষ করে পিস্তিল দিয়ে গুলি করেছে।
গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাজাহারুল ইসলাম বলেন, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মিয়া ও মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু সমর্থকদের নিয়ে একটি জানাজায় যাওয়ার পথে বাটাজোর বাসষ্টান্ডে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত উপজেলা যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ও আহত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহর মা বাদি হয়ে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।