বরিশাল
উজিরপুরে আওয়ামীলীগের দুই পক্ষের বিরোধের জের ধরে হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার-১
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাছের ঘেরের বিরোধকে কেন্দ্র করে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ খায়রুল বাশার ওরফে লিটনের সমর্থকদের মুরগির খমারে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট ও একটি মাছের ঘেরের ৬টি পাম্প ও একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভূত করার ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থক ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদার বাদি হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাসহ ৪০ জনকে আসামি করে সোমবার উজিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা করেছে। পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার ও সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস আটক করেছে।
স্থানীয় লোকজন, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও পুলিশ জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাছের ঘেরের বিরোধকে কেন্দ্র করে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহীন হাওলাদারের সাথে সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ খায়রুল বাশার ওরফে লিটনের দীর্ঘ দিন যাবত বিরোধ চলে আসছিল। পশ্চিম সাতলা গ্রামে প্রায় ২ হাজার ৫শত একর জমির একটি মাছের ঘেরটি বিগত ১৫ বছর যাবত সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ খায়রুল বাশার ওরফে লিটনসহ তার সমর্থকরা ভোগ দখল করে আসছিল। সম্প্রতি সময়ে ওই ঘেরটির দখল নেন সাতলা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহীন হাওলাদার ও তার সমর্থকরা।
সাবেক চেয়ারম্যান লিটনের সমর্থক রুবেল বালি (৪৫) অভিযোগ করে বলেন, আমার মুরগির খামারে খাবারসহ মালামাল পরিবহন ও গ্রামবাসির যাতায়াতের সুবিধা্যার্থে আমি আমার স্বজনদের নিজস্ব জমির উপর দিয়ে পশ্চিম সাতলা মৌজা হইতে পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করি। শনিবার সাতলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শাহীন হাওলাদার কাজে বাধা করে নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে তার সাথে আমার ও আমার সমর্থকদের বাকবিতান্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের চাচাতো ভাই আসাদ হাওলাদার (৪৫), তার সহদর ইলিয়াস হাওলাদার (৪২) গোলাম কিবরিয়া (৪০)র নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন দুধর্ষ সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি মাইক্রো ও একটি ট্রালারযোগে পশ্চিম সাতলা গ্রামে ঢুকে আমার মুরগির খামারে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং খামারে থাকা ১২৩ বস্তা মৎস্য খাবার লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া সন্ত্রাসীরা আমার মৎস্য ঘেরে থাকা ৬টি ইঞ্জিন চালিত সেচপাম্প ও একটি ইঞ্জিনি চালিত ট্রালারে আগুন দিয়ে ভস্মিভূত করেছে ও সেচ পাম্পের প্রায় (চার ইঞ্চি) ২হাজার ফুট পেলাষ্টিক পাইপ কুপিয়ে কেটে খন্ড-বিখন্ড করেছে। হামলাকারীরা অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট করে আমার প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। সাবেক চেয়ারম্যান লিটনের আরেক সমর্থক সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২নং ওয়ার্ড সভাপতি মোঃ ইদ্রিস হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, বিরোধের জের শাহীন হাওলাদারের সন্ত্রাসী শসস্ত্র সমর্থক শনিবার দিবাগত রাতে আমার খামারে হামলা করে ভাঙচুর –, অগ্নি সংযোগ, লুটপাটসহ তান্ডব চালিয়েছে।
সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল বাসার অভিযোগ করে বলেন, সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন হাওলাদার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমাদের মাছের ঘেরটি দখল করতে এলাকায় সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে। আমরা আমাদের জমিতে রাস্তা নির্মান করতে গেলে চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী আসাদ বাহিনী কাজ বন্ধ করে দেয়। শনিবার রাতে আমার সমর্থকদের ঘেরে ও খামারে তান্ডব চালিয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোঃ আসাদ হালদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ হামলার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই। অভিযোগের ব্যাপারে সাতলা ইউনিয়ন ওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহীনের হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার বিষয়ে আমি জড়িত না। মূল বিষয় হলো ১৩ বছর যাবত সভাপতি লিটন ও তার সমর্থকরা ঘের জোবর দখল করে কৃষকদের ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তিতে আমি কৃষকদের নিয়ে ঘেরটি উদ্ধার করে মাছ চাষ শুরু করেছি । লিটন ও তার লোকজন আমার ও আমার সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ তৌহীদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় লিটনের সমর্থক ২নং ওয়ার্ড সভাপতি মোঃ ইদ্রিস হাওলাদার বাদি হয়ে ৪০ জনকে আসামি করে সোমবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনায় জড়িত মাইক্রোবাস চালক মোঃ টুটুলকে (৩০) গ্রেপ্তারসহ সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।