গৌরনদী
রমজানে কমদামে পন্য বিক্রিতে গৌরনদীতে ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, ক্রেতাদের ভীড়
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরের গৌরনদী বাসষ্টান্ডে লাইনে দাড়িয়ে শত শত নারী পুরুষ মাহে রমজানে পন্য সামগ্রী কিনছেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ কেনাকাটা। স্থানীয় হাট বাজারের চেয়ে কম দামে এসব সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে বলেই ক্রেতা সাধারনের এত ভিড় গৌরনদীর “ন্যায্যমূল্যের” এই দোকানে। গৌরনদীর স্থানীয় কতিপয় যুবকের উদ্যোগে মাহে রমজানে স্বল্পমূল্যে ভোজ্য পন্য সামগ্রী বিক্রির জন্য ন্যায্যমূল্যের এই দোকান চালু করা হয়। আগামি একমাস এ দোকানে কমদামে ন্যয্যমূল্যে মালামাল বিক্রি করা হবে বলে “ন্যায্যমূল্যের” দোকানের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান । গত ১ রমজান “ন্যায্যমূল্যের” এ দোকোনের উদ্ধোধন করেন গৌরনদী পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান।
“ন্যায্যমূল্যের” দোকানে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তরা জানান, রমজান আসলেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়ে সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। তাই ক্রেতা সাধারনের ন্যয্যমূল্যের জিনিসপত্র ক্রয়ের সুবিধ্যাার্থে তারা কতিপয় যুবক ও তরুন নিজেরা অর্থ দিয়ে ন্যয্যমূল্যের দোকান চালু করেছেন। ন্যয্যমূল্যের এ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে রমজান মাসজুড়ে বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হবে। ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন সহ¯্রাধিক নারী পুরুষ সারিবদ্ধ হয়ে হয়ে কেনাকাটা করেন। পণ্য বিক্রি করতে মোট ২০/৩০ জন কর্মী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। এখানে রমজানে প্রয়োজনীয় ৪০টি পন্য বিক্রি করা হয়। যা বাজারের খুচরা দোকোনে বিক্রির মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করা হয়।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অস্যখ্য নারী ও পুরুষা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনাকাটা করছেন। ক্রেতারা এখান থেকে ছোলা ডাল, মুসুরীর ডাল, এ্যাংকর ডাল, ভেশন, চিনি খোলা, চিনি প্যাকেট, বোতল জাত সয়াবিন তৈল, চিড়া, মুড়ি, পিয়াজ, বিভিন্ন প্রকারের খেজুর, আপেল, মালটা, আঙ্গুর, বিভিন্ন জাতের কমলা, নেশপতি, আনারস, পেয়ারা, মালটা, আনার, পেপে , কলা, রুহআফজাসহ ৪০ আইটেমের পন্য বিক্রি হচ্ছে। যা বাজার থেকে খুজরা মূল্যের অনেক কম দামে পাচ্ছেন ক্রেতারা। এ সময় পন্য ক্রয়ের জন্য অপেক্ষমান মমতাজ বেগম (৩৫) বলেন, ন্যায্যমূল্যে দোকান চালু করে প্রসংশনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন যুব ও তরুন সমাজ। তাদের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করার বিষয়টিতে আমরা খবুই খুশি। রমজান আসলেই যেখানে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম অধিক মূল্য বৃদ্ধি করে সেখানে এই যুবকরা কমদামে বিক্রি করছে। তাদের জন্য দেয়া রইল। নুরু সরদার (৪০) নামের আরেক ক্রেতা বলেন, কম দামে মানসম্মত পণ্য এখানে কিনতে পারছি । দাম বাজারের চেয়ে অনেক কম। এ বাজার চালু হওয়ায় এবারের রমজান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় কিছুটা স্বস্থি পাচ্ছি।
এ সময় ন্যয্যমূল্যের দোকানের উদ্যোক্তা মোঃ আলমাস হাওলাদার, মোঃ সাদ্দাম খানসহ একাধিক উদ্যোক্তা জানান, রজমানে মাসে বাজারে পন্যর মূল্য বৃদ্ধি হিড়িক পড়ে তাই আমরা স্বল্প মূল্যে ক্রেতা সাধারনের পন্য ক্রয়ের সুবিধ্যাার্থে কতিপয় যুব ও তরুন বন্ধুমহল নিজেরা ১০ থেকে ২০ হাজার করে পূজি সংগ্রহ করে পাইকারী দামে পন্য কিনে এনে কেনা দামের চেয়ে সামান্য খরচের অংশ নিয়ে মালামাল বিক্রির সিদ্বান্ত নেই। এতে ক্রেতারা অনেক কম দামে পন্য কিনতে পারছেন। তারা বলেন, আমাদের লাভের কোন প্রয়োজন নাই শুধুমাত্র ক্রেতার সুবিধ্যাার্থে কঠোর পরিশ্রম করে এ কাজে ২০/৩০ জন উদ্যোগি স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। কেউ কেউ পাইকারী বাজার থেকে মালামাল সংগ্রহ করেন আবার কেউ কেউ তা মেপে প্যাকেটজাত করার কাজে নিযুক্ত। আবার ১০ জনে বিক্রি কাজে ব্যস্থ থাকেন। কম দামে পন্য পাওয়ায় ব্যাপক সারা ফেলেছে আমাদের ন্যায্যমূল্যের বাজার। বাজারে খুচরা সাধারন খেজুর বিক্রি হয় ২৫০টাকা এখানে ১৮০টাকা, ভাল খেজুর বাজারে একহাজার টাকা এখানে ৭০০টাকা, কমলা চায়না বাজারে ৩৩০ টাকা এখানে ২৬০টাকা, আপেল হানি বাজারে ৩৩০ টাকা এখানে ২৬০টাকা, মালটা বাজারে ৪শ টাকা এখানে ৩৪০টাকা, সয়াবিন তৈল প্রতিলিটার বাজারে ১৬০ এখানে ১৪৫টাকা, চিকন মুড়ি বাজারে ৯০টাকা এখানে ৭০টাকা, ছোলা বাজারে ১১০টাকা এখানে ৯৬টাকা। এভাবে ৪০টি পন্য সামগ্রী কম দামে কিনতে পারেন ক্রেতাসাধারনরা। তাওয়াবীন ইসলাম ওরফে নিপুন তালুকদার ও রিয়াজ মোল্লা বলেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আমাদের বেচাবিক্রির থাকলেও প্রতিদিন দুপুরের মধ্যে সব মাল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ন্যায্যমূল্যের দোকানে গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা বেচাকেনা হয় । ক্রেতার মাঝে চাহিদামত মালামাল সরবারহ করতে আরো পূজি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সিদ্বান্ত নিয়েছি। বিভিন্ন বাজার থেকে বিভিন্ন রকমের মালামাল সংগ্রহ করে তা মেনে প্যাকেট জাত করে নিয়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে সব বিক্রি হয়ে যায়। কাজটি অনেক পরিশ্রমের হলেও আমাদের সঙ্গে থাকা যুব ও তরুনরা স্বেচ্ছায় আনন্দের সঙ্গে কাজটি করেছেন।
গৌরনদী পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় যুব ও তরুন সমাজ যে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন এতে পবিত্র মাহে রমজান মাসে ক্রেতা সাধারন বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন। খুজরা বাজারের চেয়ে অধিক কমমূল্যে পন্য কিনতে পারছেন মানুষ। যুব ও তরুন সমাজের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। গৌরনদীর যুব সমাজের এ ঘটনা দেশে বিভিন্ন স্থানে দৃষ্ঠান্ত হতে পারে। তাহলে সর্বত্র ব্যবসায়ীরা পন্যসামগ্রীর মূল্য কমাতে বাধ্য হবে। গৌরনদীতে ন্যায্যমূল্যের এ দোকান চালু হওয়ার পরে কমদামে পন্য বিক্রির খবর ছড়িয়ে পড়লে মানুষ এখানে ভীড় করে ফলে খুচরা দোকানে কেনাকাটা কমে যাওয়ায় তারাও দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে।