গৌরনদী
গরু চুরি ঠেকাতে গোয়াল ঘরে নির্ঘুম রাত কাটান খামারিরা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সময়ে গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। গরু চুরি ঠেকাতে গোয়াল ঘরে নির্ঘুম রাত কাটান খামারি ও কৃষকরা। বুধবার দিবাগত রাতে পাহারা বসিয়ে এক চোরকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে ভূক্তভোগী কৃষক ও স্থানীয়রা। গত ৭দিনে ২০টি চুরি সংগঠিত হয়। পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে বলে থানা সূত্র জানান।
স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী কৃষক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার রতœপুর, মোল্লাপাড়া, পাকুরিতা, বাটরা, আহুতি বাটরা, বাগধাসহ বিভিন্ন গ্রামে গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। গত ৭দিনে ২০টি বাড়িতে গরু চুরি সংগঠিত হয়। চোরেরা ট্রাক, মিনি ট্রাক নিয়ে একাধিক গ্রæপে ভাগ হয়ে গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরি করে যানবাহনযোগে গরু নিয়ে পালিয়ে যান বলে স্থানীয় ও ভূক্তভোগী কৃষকরা জানান। উপজেলার রতœপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মোল্লাপাড়া গ্রামের স¤্রাট বিশ্বাস জানান, প্রতিদিনের মত গরুকে রাতের খাবার খাইয়ে গোয়াল দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক তিনটার দিকে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের একদল চোর গোয়াল ঘরের দরজা ভেঙ্গে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা মূল্যের অষ্ট্রেলিয়ান প্রজাতির গরু চুরি করে পিকআপে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় টের পেয়ে ডাক চিৎকার দিয়ে লোকজন জড়ো করে চোরের দলকে ধাওয়া করলে চোর চক্রের সদস্যরা পিকআপ ভর্তি গুরু নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ধাওয়া করে টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার জোগাড়চর গ্রামের শুক্কুর আলীর ছেলে গরু চোর রাছেল মাহমুদ ভুইয়াকে (৪৫) আটক করে গন ধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
একই গ্রামের জগদীশ হালদার (৩৫) জানান, ওই একই রাতে (বুধবার দিবাগত) তার গোয়াল ঘরের তালা ভেঙ্গে গরু চুরির সময় কুকুরের ডাক চিৎকারে শুনে বাড়ির লোকজন ঘুম থেকে উঠে ডাক চিৎকার দিলে চোরেরা পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যান ফলে তার গরুটি রক্ষা পান। রাজিহার ইউনিয়নের রাজিহার গ্রামের স্বপন হালদার অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমার গোয়াল ঘর থেকে দুটি গরু চুরি করে ট্রাকযোগে নিয়ে যান অজ্ঞাতনামা চোরেরা। আমি টের পেয়ে উঠে চোরকে প্রতিরোধ করার আগেই গরু নিয়ে পালিয়ে যান। একই কথা জানালেন ডাসার গ্রামের গোপাল মন্ডল। তিনি বলেন, চোরেরা আমার গোয়াল ঘর থেকে একটি গাভী ও দুটি ষাড় গরু চুরি করেনিয়ে গেছে। ছয়গ্রাম গ্রামের সাইদুল (৩২), মোল্লাপাড়া গ্রামের মোতালেব হোসেন (৪২), রাজিহার গ্রামের আব্দুস সোবাহান (৬০)সহ ভূক্তভোগী কয়েকজন কৃষক জানান, গত ১৫ দিন আগ থেকে আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গরু চুরু ঘটনা শুরু হয়। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে গত ৭ দিনে রাতে গরু চুরি হিড়িক পড়ে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে উপজেলার পাকুরিতা গ্রামের বিধান মন্ডলের ১টি, আহুতি বাটরা গ্রামের উত্তম মজুমদারের ২টি, বারপাইকা গ্রামের বিষ্ণু বাড়ৈর ১টি, গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শামীম ফরিয়ার ৩টি, ভালুকশী গ্রামের অজু হাওলাদারের ১টি, রামশীল জয়ধর বাড়ী থেকে ২টি বিদেশী জাতের গাভী চুরিসহ ২০টি গরু চুরি ঘটনা ঘটেছে। এতে করে গরুর খামিরা ও ভূক্তভোগী কৃষকরা আতংকিত হয়ে পড়ে। উপজেলার পশ্চিম মোল্লাপাড়া গ্রামের পার্বতী হালদার বলেন, গরু পালন কইররাই মুই বউ পোলাপান খাইয়া পইররা কোনরহম আছি। বর্তমানে যেইভাবে গরু চুরি শুরু অইছে হেতে মুই গরু নিয়া অনেক চিন্তায় আছি। গরু চুরির ভয়ে মোর গরু রক্ষায় প্রতি রাতেই বসত ঘর ছাইররা মুই গোয়াল ঘরে ঘুমাই। কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, এ এলাকার গুরু চোরেরা আন্তঃ জেলা গরু চোর চক্রের সদস্য। স্থানীয় চোরদের সহায়তায় তারা ট্রাক ও মিনি ট্রাক নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করে গরু চুরি করে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। একই রাতে একাধিক স্থানে চুরির ঘটনা ঘটায় ধারনা করা হচ্ছে চোর চক্র পৃথক পৃথক গ্রæপে ভাগ হয়ে চুরি সংগঠিত করে।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়রা টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার জোগাড়চর গ্রামের শুক্কুর আলীর ছেলে গরু চোর রাছেল মাহমুদ ভুইয়াকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। গরু চুরির এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার থানায় মামলা দায়েরের পর আটক রাছেল মাহমুদ ভুইয়াকে গ্রেপ্তার বরিশাল আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। এছাড়া চুরি ঠেকাতে গরুর খামারি ও কৃষকদের পাহারা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশী টহল জোরদারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।