গৌরনদী
হত্যা মামলার বাদির উপর হামলার ঘটনায় পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের মধ্যবাকাল গ্রামে আলোচিত দেব প্রসাদ কর্মকার হত্যা মামলার বাদিকে মামলা তুলে নিতে অপহরনসহ প্রাননাশের হুমকি দিয়ে আসছিল আসামিরা। এ ঘটনায় সোমবার রাতে বাদি আগৈলঝাড়া থানায় নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারন ডায়রী করার পর মঙ্গলবার সকালে আসামিরা বাদি হামলা চালিয়ে বাদিকে ধরে নিয়ে মারধরের ঘটনায় বুধবার নির্যাতিত বাদির মা সাবানা মজুমদার বাদি হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত এলিজাবেথ অনেকটা সুস্থ্য ও শঙ্কামুক্ত রয়েছে বলে চিকিৎসক জানান।
মামলার আসামিরা হলেন আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের কাদের ভাট্রির ফিরোজ ভাট্রি (৩৫), তার স্ত্রী সাথী বেগম (২৮) তার ভাতিজা অর্নব ভাট্রি (১৯), বোন বিলকিস বেগম (৪১) ও তানজু বেগম (৩৮)সহ অজ্ঞাত কয়েকজন। মামলায় বলা হয়, তার স্বামী দেব প্রসাদ কর্মকার হত্যার ঘটনায় মেয়ে এলিজাবেথ কর্মকার বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটি সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে। হত্যা মামলা তুলে নিতে আসামিরা বিভিন্ন সময় বাদিকে হুমকি দিয়ে আসছিল তারই ধারাবাহিকতায় ২০ নভেম্বর বিকেলে আসামিরা বাড়িতে এসে হত্যা মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় এবং মামলা তুলে না নিলে অপহরন করে প্রাননাশের হুমকি দেন। ওই দিন রাতে বিষয়টি থানায় একটি সাধারন ডায়রী করা হয়। পরের দিন মঙ্গলবার সকালে আসামি ফিরোজের নেতৃত্বে ৬/৭ জন সন্ত্রাসী দেশীয় ধারাল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়িতে হামলা করে বাদিকে অপহরন করে নিয়ে গিয়ে গামছা দিয়ে চোখ বেধে একটি বাড়িতে নিয়ে কক্ষে আটকে রেখে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে ফিরোজ ভাট্রি অপহরনের কথা অস্বীকার করে বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আমরাও আহত হয়েছি। আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলম চাদ মঙ্গলবার বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ফোন দিলে তিনি রিসিপ করেননি পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালোও সারা দেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় আহত এলিজাবেথের মা সাবানা মজুমদার বাদি হয়ে প্রতিপক্ষের ৫ জনের নাম উল্লেখ করে বুধবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
উল্লেখ্য আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের দেব প্রসাদ কর্মকারের সাথে একই গ্রামের কাদের ভাট্রির সঙ্গে মধ্যবাকাল মৌজার ৭৮ শতাংশ জমাজমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। জমি ফিরে পেতে দেবপ্রসাদ কর্মকার আদালতে মামলা করলে ২০০৭ সালে আদালতের রায়ে সে জমি ফিরে পান। জমি ফিরে পাওয়ার পর থেকে প্রতিপক্ষ একই গ্রামের কাদের ভাট্রি (৭০), তার ছেলে সন্ত্রাসী ফিরোজ ভাট্রি (৩৫), মুসফিকুর রহমান ভাট্রি (৪০) সাইফুল ভাট্রি (৩০) ফরিদ ভাট্রি (৩৩), মেয়ে জামাতা রশিদ সিকদার ও মোঃ অদুদ হোসেন (৪৫) ও শাহ আলম (৫৫) দেব প্রসাদ কর্মকারকে অপহরন করে হত্যার হুমকি দেয়। হুমকির ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নিহত দেব প্রসাদ আগৈলঝাড়া থানায় ৫টি সাধারন ডায়রী করেছিলেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল দেব প্রসাদকে আগৈলঝাড়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তারদের ভূমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। ২২ এপ্রিল রাতে প্রতিপক্ষ লোকজন তাকে অপহরন করে হত্যা করে লাশ গুম করে। ২৫ এপ্রিল বাকাল ইউনিয়নের বাকাল গ্রামের পরিত্যাক্ত ভিটা থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছর ২৮ এপ্রিল দেব প্রসাদ কর্মকারকে অপহরন করে হত্যার ঘটনায় নিহতের কন্যা এলিজাবেথ বাদি হয়ে গ্রামের কাদের ভাট্রি (৭০), তার ছেলে সন্ত্রাসী ফিরোজ ভাট্রি (৩৫), মুসফিকুর রহমান ভাট্রি (৪০) সাইফুল ভাট্রি (৩০) ফরিদ ভাট্রি (৩৩), মেয়ে জামাতা রশিদ সিকদার ও মোঃ অদুদ হোসেন (৪৫) ও শাহ আলমকে (৫৫) আসামি করে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে।