গৌরনদী
গৌরনদীতে যুবলীগনেতা কর্তৃক হাত-পা ও পাজরের হাড় ভেঙ্গে দেওয়া যুবদল নেতার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক মো. বাচ্চু সিকদারের (৪২) হাত-পা, পাজরের হাড় হাতুড়ি ও জিআই পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে উপজেলার গৌরনদী পৌরসভার গয়নাঘাট কাঁচাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গৌরনদী পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতিক মিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মো. জাকির হোসেন ওরফে বাচ্চু সিকদার। গত ১১দিন ধরে বরিশাল ডায়াবেটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
যুবদল কেন্দ্রেীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রোববার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন তারেক জিয়া মুঠোফোনে যুবদল নেতা বাচ্চু ও তার স্ত্রী লিপি আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসার ও পরিবারের খোজ খবর নেন। একই সময় তারেক জিয়া তার প্রতিনিধি যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান দুলালের মাধ্যমে বাচ্চুর চিকিৎসার জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকার অনুদান দেন এবং তার উন্নত চিকিৎসার যবিতীয় দায়িত্ব নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি (বরিশাল বিভাগ) এইচ এম তসলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক ও বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের আহবায়ক সালাউদ্দিন পিপলু, সদস্য সচিব গোলাম মোর্শেদ মাসুদ, বরিশাল মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এড. মাজাহারুল ইসলাম জাহান, বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ সভাপতি নুরুল আমিন কয়েস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মাহফুজ, মহানগর শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ, সহ সভাপতি কাইউম রেজওয়ান সাগর, আবু কায়সার নিশাদ, আসাদুজ্জামান তৌহিদ এবং উত্তর জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলম হাওলাদার।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন তারেক জিয়া মুঠোফোনে কথা বলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুবদল নেতার স্ত্রী লিপি আক্তার বলেন, এতবড় একজন মানুষ ফোন করে আমার সাথে কথা বলছে এটা আমার জন্য অনেক কিছু। তাছাড়া তিনি চিকিৎসা ও পরিবারের খোজ খবর নেন এতে আমরা দুজনেই খুশি। তিনি আমাকে বলেছেন (তারেক জিয়া) বোন চিন্তা করনা আমি ওর উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব নিলাম এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার খুব শীঘ্রই হবে। বাচ্চুর চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি (বাচ্চুর স্ত্রী) বলেন, দুটি পা দুট স্থানে দ্বিখন্ডিত ও বাম হাতের দুটি স্থানে ও পাজরের দুটি হাড় ভেঙ্গে দিয়েছে। এ পর্যন্ত তিনিটি অপারেশন হয়েছে। প্রচন্ড ব্যাথায় সব চিৎকার করে, ডাক্তার হাই পাওয়ার ঘুমের অষুধ দিয়েছে কিন্তু তারপরেও ঘুম হয় না। তিন-চার মাস আগেও একবার হামলা করে তাঁর স্বামীর একটি পা ভেঙে দিয়েছিলেন যুবলীগ-ছাত্রলীগের লোকজন। তারেক জিয়ার ফোন ও চিকিৎসার দায়িদ্ব নেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে যুবদল নেতা জাকির হোসেন বাচ্চু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং কাদতে কাদতে বলেন, আমার নেতার ফোন পেয়ে সকল ব্যথা বেদনা-কষ্ট আমি ভুলে গেছি। সে চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে তা হলে আমার চিকিৎসা হত না। আমাকে সাড়া জীবন পঙ্গুত্ব বরন করতে হত। আমার মনের জোর আরো বেড়ে গেছে, লিডারের ফোনে মনের শক্তি অনেক অনেক গুনে বেড়ে গেছে। সুস্থ্য হয়ে আবার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিব।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ বাবুল কুমার সাহা বলেন, ‘জাকিরের দুই পায়ের প্রতিটি পায়ে দুটি স্থান ও বাঁ হাতের দুটি স্থান ও পাজরের ভেঙে গেছে।’তাকে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা দিতে হবে। সুস্থ্য স্বভাবিত হতে অনেক সময় লাগতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গৌরনদী পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক মো. বাচ্চু সিকদার ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে উত্তর বিজয়পুর এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় গয়নাঘাট কাঁচাবাজারে আসেন। সন্ধ্যার দিকে বাজারের কাজ শেষ করে বাড়ির পথে রওনা হন। কাঁচাবাজারের পাশে মাতৃ মঙ্গল শিশু হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে ১৫ থেকে ১৬ জন লাঠিসোঁটা, হাতুড়ি, হকিস্টিক ও জিআই পাইপ নিয়ে অতর্কিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালান। মো. জাকির হোসেন ওরফে বাচ্চু সিকদার অভিযোগ করেন, গৌরনদী পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতিক মিয়ার নেতৃত্বে ১৫ থেকে ১৬ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা, হাতুড়ি, হকিস্টিক ও জিআই পাইপ নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালান। এ সময় হাতুড়ি ও জিআই পাইপ দিয়ে পিটিয়ে তাঁর হাত-পা ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি শরীর থেতলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমি বহু অনুনয়-বিনয় করে কান্নাকাটি করে জীবনভিক্ষা চাইলেও আমাকে সন্ত্রাসীরা ছাড়েনি। বাজারের ব্যবসায়ীসহ শত শত মানুষ ঘটনাটি দেখলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমাকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেননি।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরনদী পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতিক মিয়া বলেন, ‘হামলার সঙ্গে আমার বা যুবলীগের কারও কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার ও যুবলীগের বিরুদ্ধে যুবদল নেতা মিথ্যাচার করছেন।’ গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।