গৌরনদী
গৌরনদী মডেল থানার সাবেক ওসি ফিরোজ কবিরের ৬ ও স্ত্রীর ৪ বছর কারাদন্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালের গৌরনদী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ কবিরকে ৬ বছর ও তার স্ত্রী সাবরিনা আহমেদ ইভাকে চার বছর কারাদÐ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মানিলন্ডারিং আইনের একটি মামলায় বুধবার ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ফিরোজ কবিরের ৬ বছরের বিনাশ্রম কারাদÐ এবং অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৮ টাকা অর্থদÐে দÐিত করেছেন। গৌরনদী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ কবিরের গৌরনদীতে চাকুরী কালীন সময়ে তার দূর্নীতি, ভয়ভীতি দেখিয়ে চাদাবাজি, ঘুষসহ নানান অনিয়মের বিরুদ্ধে দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম জহির ধারাবাহিতভাবে রিপোর্ট করার কারনে গৌরনদী উপজেলার এক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার মদদে সাংবাদিক জহিরের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্রে লিপ্ত হন ওসি ফিরোজ কবির। এমন কি জহিরকে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্টপোষক হিসেবে মিথ্যা অপবাদে জড়িয়ে ক্রস ফায়ার দেয়ার হুমকি দিয়ে জহিরের বিরুদ্ধে গোপনে ১১টি জিডি করেছিলন ওসি ফিরোজ কবির। ষরযন্ত্রকারী সেই ওসি ফিরোজ মানিলন্ডারিং আইনের একটি মামলায় চাকুরীচ্যুত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে স্বস্ত্রীক কারাগারের চার দেয়ালে বন্দি।
রায়ে বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফিরোজ কবির কর্তৃক অর্জিত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি অর্থাৎ ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ১৯৪ টাকার সম্পত্তি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(৩) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত করেছেন আদালত। রায়ে আসামি ফিরোজ কবিরকে প্রদত্ত অর্থদÐের টাকা রায়ের দিন হতে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ব্যর্থতায় তা দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ এর ৩৮৬ ধারা অনুযায়ী আদায়যোগ্য হবে। মামলায় বলা হয়, আসামি ফিরোজ কবির ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি হতে ২০১৬ সালের ৩১ মে র্পযন্ত এবি ব্যাংক গুলশান শাখার, ডাচ বাংলা ব্যাংক, গুলশান শাখার, এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের গুলশান শাখার, ইসলামী ব্যাংক, গুলশান শাখা, ব্রাক ব্যাংক, গুলশান শাখার চলতি হিসাবের এবং তার স্ত্রী সাবরিনা আহমদে ইভার নামে পরিচালিত ডাচ বাংলা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সর্বমোট ৩০৯ দশমিক ৯৭ লক্ষ টাকা জমা করেন। তাদের ব্যাংক হিসাবসমূহে পেশার সঙ্গে অসামঞ্জস্যর্পূণ বিপুল অঙ্কের লনেদের সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ হিসাব খোলার সময় ফিরোজ কবির অর্থের উৎস চাকরি দেখিয়েছেনে। কিন্তু যে ধরনের ও যে অঙ্কের লেনদেন হয়েছে তা বেতন ভাতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অর্থের উৎস সম্পর্কে অভিযুক্তরা কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা বা প্রমাণ দাখিলে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে প্রাথমকিভাবে প্রমাণিত হয় যে, জমাকৃত উক্ত অর্থ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(শ) ধারায় উল্লখিতি ‘র্দুনীতি ও ঘুষ’ সংক্রান্ত সম্পৃক্ত অপরাধলব্ধ। উক্ত হিসাবসমূহের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ফিরোজ কবিরও তার স্ত্রী সাবরিনা আহমদে ইভার সঞ্চয়ী এবং চলতি হিসাবসমূহে ছোট ছোট অঙ্কে রাউন্ড ফিগারে অর্থ জমা করা হয়েছে।
ফিরোজ কবির ও তার স্ত্রী সাবরিনা আহমদে ইভা খুবই অল্প সময়রে ব্যবধানে বিপুল সম্পদ র্অজন করছেন। তাদের অর্জিত সম্পদের মধ্যে অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত সম্পদসমূহ হলো-ফিরোজ কবিরের নামে গুলশানের শাহজাদ পুরে এন. জি. জাফর নিবাসনামীয় ০৯ তলা ইমারতের ৭ম তলার ১০০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট এবং সাবরিনা আহমেদ ইভার নামে একই ঠিকানার ৭ম তলার ১০০০ বর্গফুট আয়তনের এবং একই তলার ১১০০ বর্গফুট আয়তনের ও ৯ম তলায় ৯০০ বর্গফুট আয়তনের মোট তিনটি ফ্ল্যাট, সর্বমোট চারটি ফ্ল্যাট যার দালিলিক মূল্য ৮৩ দশমিক ৯৮ লাখ টাকা। ঢাকা মেট্টো -গ-২৩-১৯৯২ নং মোটরগাড়ি, যার মূল্য ৯ লাখ টাকা। সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবসমূহে ৫ দশমিক ১৭ লাখ টাকা। দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের পর ২০১৯ সালে দুদক এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন।’
২০১৭ সালের গত ২এপ্রিল গৌরনদী মডেল থানায় যোগদান করেন নবাগত ওসি ফিরোজ কবির। যোগদান করেই মাদকমুক্ত গৌরনদী ঘোষনা দেন। যোগদানের পরে এক মাসের মধ্যে ওসি ফিরোজ কবির ৯০ শতাংশ মাদক নিমূল করে তার রাখেন। তিন্তু একমাস অতিবাহিত হওয়ার পরে সুনাম কুড়িয়ে মাদক মুক্ত করার ঘোষনার অন্তরালে ওসি ফিরোজ কবির বানিজ্য শুরু করেন। নিরহ মানুষকে হয়রানী করে অর্থ আদায় করা ছিল নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। বৃত্তবান প্রবাসী, ব্যবসায়ীসহ সম্পদশালী ব্যক্তিদের ধরে এনে মাদকের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। গত ১১ মে ২০১৭ইং তারিখ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় “দাবি করা তিন লাখ টাকা না পাওয়ায় নির্যাতন”সহ বিভিন্ন শিরোনামে ওসি ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রথম আলো পত্রিকায় সংবাদ ধারাবাহিতভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ওসি ফিরোজ কবির ক্ষিপ্ত হয়ে গৌরনদীর প্রভাবশালী এক আওয়ামীলীগ নেতার ছত্রছায়ায় দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম জহিরের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র শুরু করেন। নির্ভীক কলম সৈনিক জহিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে ১১টি জিডি করেন এবং মাদকদের পৃষ্টপোষক হিসেবে মিথ্যা অপবাদে জড়িয়ে ক্রস ফায়ার দেয়ার হুমকি দেন। পরবর্তিতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে প্রকাশিত নিউজের সত্যতা পাওয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ওসি ফিরোজ কবিরকে গৌরনদী থানা থেকে ৩১ জুলাই বরিশাল জেলা জেলা পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার নেন। গৌরনদী থেকে চলে যাওয়ার সময় ফিরোজ কবির সাংবাদিক জহিরকে হুমকি দেন তিনি আবার পুনরায় গৌরনদীর ওসি হিসেবে ফিরে আসবের এবং জহিরকে দেখে নিবেন। ওসি ফিরোজ কবিরের সেই আশা পুরন হল না। আজকে র্দনিিতর দায়ে নিজেই কারাগারে বন্দি।