গৌরনদী
উজিরপুরে ৪ শ সড়কেই খানাখন্দে চরম দূর্ভোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত ৪শত ৭৭টি সড়কের মধ্যে প্রায় ৪শ সড়কই খানাখন্দে চরম জনদূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সব সড়ক গত ১৫ বছরেও সংস্কার করা হয়নি বলে ভূক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান। এ সব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, “এমনও সড়ক আছে সকালে সাদা গরু বেধে রাখলে বিকেলে লাল গরুতে রুপান্তরিত হয়”।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অধীনে ৪৭৭ টি সড়ক রয়েছে। যার দৈর্ঘ ১ হাজার ১শত ৯০ কিলোমিটার। তার মধ্যে কাচা ৭০৬, কার্পের্টিং ৩৩৩, এইচবিবি ১১৬, আরসিসি ৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। তার মধ্যে গত ১৫ বছরে সংস্কার না হওয়ায় প্রায় ৪ শ সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ দুটি সড়কে সংস্কার কাজ চলমানের কথা দাবি করলেও বাস্তবে তার সত্যতা নেই।
২০০৭ সালে উজিরপুরের ওটরা ইউনিয়নের চেরাগ আলী থেকে হারতা ইউনিয়নের হারতা বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কটি বরিশাল এলজিইডি কার্পের্টি সড়কে রুপান্তরিত করে। গত ১৫ বছরে সড়কটির কোন সংস্কার কাজ করা হয়নে ফলে অবস্থা খুবই নাজুক। সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের ৮ কিলোমিটর খানাখন্দে পরিনত হয়েছে। সড়কের হাবিবপুর বাজারের পূর্ব পাশে প্রায় ২ কিলোমিটর সড়কে কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে গর্তে পানি ঢুকে সমান্তরাল হয়ে যায় এবং অদৃশ্য খানাকন্দে পড়ে প্রায় মটরসাইকেল আরোহীসহ পথচারীরা দূর্ঘটনার শিকার হন। এ ছাড়া বাউলিয়া, কেসবকাঠীসহ ৫টি পয়েন্টে কাচা সড়কে পরিনত হয়েছে। এ সময় হাবিবপুর এলাকার সোমেদ আলী (৫৫), আব্দুল হাই সরদার (৩৫), বাউলিয়া এলাকার সুব্রত মন্ডল (২৫)সহ অনেকেই অভিযোগহ করে বলেন, এ সড়কটি নির্মিত হওয়ার পরে গত ১৫ বছরে কোন সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে সড়কটি খানাখন্দের কারনে মরন ফাদে পরিনত হয়েছে। আমরা সংস্কারের জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে ধর্না দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
২০০১ সালে উজিরপুর হইতে সাতলা ভায়া হারতা ২৬ কিলো মিটর সড়কটি বরিশাল এলজিইডি কার্পেটিং করেন। পরবর্তি উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লির মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে বরিশাল টু সাতলা বাস চলাচল শুরু করে। স্থানীয়রা জানান, গত ২২ বছরে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে কোথাও কোথাও কাচা সড়কে পরিনত হয়েছে। হারতা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও হারতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হরেন রায় বলেন, বরিশালের অন্যতম বৃহত বাজার হারতা বাজার। এখানে ব্যবসায়ীরা ট্রাকযোগে মালামাল পরিবহন করত কিন্তু সড়কটি চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় গত ২ বছর ধরে এ সড়কে যান বাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম বাস চরাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন সময় সাংসদের কাছে মানুষ গেলে দূর্ভোগের কথা জানালে সংস্কারের নামে মাত্র কাজ শুর ুহয় কিন্তু পরবর্তিতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বরিশাল বাস চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মোঃ ফরিদ হোসেন বলেণ, সড়কটি খানাখন্দ হয়ে পড়ায় বাস চলাচল বণ্দ রয়েছে। আমরা উজিরপুর প্রশাসন ও প্রকৌশল অধিদপ্তরকে সংস্কারের জন্য অনুরোধ করলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। এ ছাড়া হারতা বড় ব্রিজ থেকে ভিম মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত, উজিরপুর ধামুরা সড়ক, উজিরপুর সাকরাল সড়কের একই চিত্র দেখা গেছে। সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহীন হাওলাদার জানান, তার ইউনিয়নে শিবপুর বাজার থেকে সীমান্তবর্তি বাগধা বাজার ১৬ কিলোমিটার, বিনয় বাজার থেকে ওঝাকান্দি ২ কিলোমিটার সড়ক দুটি গত দেড় যুগেও সংস্কার করা হয়নি। এ সড়ক দুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে সড়কটির দুরাবস্থার কারনে সাধারন মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুব্রত রায় সড়ক সংস্কার না হওয়া ও সাধারন মানষের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, অধিকাংশ সড়কই সংস্কার না হওয়ায় চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর সড়ক রক্ষনাবেক্ষনের জন্য মাত্র ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। অথচ নির্মিত সড়ক সংস্কার বা রক্ষনাবেক্ষনের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ৭৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। চেরাগ আলী থেকে হারতা সড়ক প্রসঙ্গে বলেন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সড়কটি সংস্কারের জন্য শেখ এন্টারপ্রাইজকে কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয় কিন্তু ঠিকাদার ৫০ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়ে কাজ ফেলে চলে যায়। যে কারনে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভ’ক্তসহ তার জামানাত প্রায় দেড় কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। নতুন করে সংস্কারের জন্য প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।