গৌরনদী
গৌরনদীতে সন্ত্রাসী হামলায় নারী নিহত, আহত-৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের বংকুরা গ্রামে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে বুধবার রাতে এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ সময় ৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় একটি বসতঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা মোঃ হানিফ বাদি হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনাম আসামি করে বৃহস্পতিবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন, নিহতের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের বংকুরা গ্রামের আর্শেদ বয়াতির ছেলে দুলাল বয়াতির (৪৫) সঙ্গে একই গ্রামের সৌদী প্রবাসী বারেক বেপারীর স্ত্রী রিনা বেগমের (৩৮) বিরোধ চলছিল। গত মঙ্গলবার দুলাল বয়াতি রিনা বেগমের জমিতে ঘাষ কাটতে যান। এ সময় উভয়ের মধ্যে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে রিনা বেগম দুলাল বয়াতিতে চড়থাপ্পর মারলে দুলালও রিনা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। বিষয়টি রিনা বেগম তার মেয়ে সোনিয়ার স্বামী গৌরনদী পৌর সদরের আশোকাঠি গ্রামের মোঃ নান্নু কাজীর ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য মোঃ নাসির কাজীকে (৪৫) অবহিত করেন। নাসির কাজী তার বন্ধু গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী সদস্য সজীবুর রহমান ওরফে জিয়াসহ২০/২৫ জন নেতাকর্মী বুধবার সন্ধ্যায় বংকুরা গ্রামে যান।
নিহতের ভাতিজা মোঃ রকি বয়াতি (৩৫) অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবারের হাতাহাতির ঘটনার জের ধরে রিনা বেগমের মেয়ে জামাতা যুবলীগ নেতা নাসির কাজী ও ছাত্রলীগ নেতা সজীবুর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চাচা দুলাল বয়াতির বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা চাচা দুলাল বয়াতির বসত ঘরের ব্যাপক ভাঙচুর করে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী মাজেদ সরদার (৩৮) জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজ বাড়ি যাওয়ার পথে দুলাল বয়াতির বাড়িতে হামলার ঘটনা দেখে এগিয়ে যাই। সেখানে প্রবাসির স্ত্রী রিনা বেগমের মেয়ে জামাতা নাসির কাজীর নেতৃত্বে ২০/২৫ জন হামলা চালায়। হামলাকারীরা দুলাল বয়াতিকে লক্ষ করে ধারাল অস্ত্রের আঘাত করলে বোন শুকুরন বেগম (৪৮) ভাইকে রক্ষা করতে গেলে মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় দুলাল বয়াতির স্ত্রী শিল্পি বেগম (৩২) মেয়ে চন্দ্রহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী মনিকা আক্তার (১৫) শ্যালিকা মিনারা বেগম (৪৫) ও হামলা ফিরাতে গিয়ে প্রতিবেশী মাজেদ সরদার (৩৮) ৫ জন ধারাল অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। আহতদের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মনতোষ হালদার জানান, নিহত শুকুরন বেগমের মাথায় ধারাল অস্ত্রে আঘাত রয়েছে। আঘাতের গভীরতা বেশী হওয়ায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনের ফলে সে মারা গেছে।
প্রবাসীর স্ত্রী রিনা বেগম ও তার জামাতা নাসির কাজী ও তার বন্ধু ছাত্রলীগ নেতা সজীবুর রহমানের কাছে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে একাধিকবার ফোন করলে তাদের মঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তর ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে। তবে রিনা বেগমের মেয়ে নাসির কাজীর স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমার মা ও স্বামী আমাকে ফোন করে বাড়িতে কিছু ঝামলো হয়েছে জানিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয় তারপর থেকে আর তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা মোঃ হানিফ বাদি হয়ে নাসির কাজী (৪৫), সজীবুর রহমান (২৫), তাদের সহযোগী মোঃ রাব্বি (২৬), ডায়মন্ড (৩৫), স¤্রাট (২৫), মোঃ সাব্বির (২০), মোঃ রিয়াজ (২৭)সহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনাম ১০/১২ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার থানায় একটি মামলা দায়েরে করেছে।