গৌরনদী
গৌরনদীতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির হামলা পাল্টা হামলা ॥ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার-৭, আতঙ্কে পুরুষশুন্য গ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী প্রচারনাকে কেন্দ্র গত শনিবার সকালে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা মো. মনিরুজ্জামান সরদার বাদি হয়ে ১৫০ জনকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে । অপরদিকে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটের ঘটনায় মঞ্জুর হোসেন বাদি হয়ে গতকাল রবিবার বরিশাল অতিরিক্ত জুৃডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরন করেছে। গ্রেপ্তার ও নতুন হামলার আশংকায় পুরুষশুণ্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। আতঙ্কে গ্রামটির তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুলে আসা ছেড়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রবিার সরেজমিনে গিয়ে কুড়িরচরের লোকজন ওভূক্তভোগী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা কর্মিদের উপর হামলা কুপিয়ে জখম ও ২০টি মটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সরিকল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান সরদার বাদি হয়ে মঞ্জুর হোসেন ও তার স্ত্রী খালেদা পারভীনকে প্রধান আসামি করে ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই দিন পুলিশ রাজু)১৯) সজিব (২০)বাবু সরদার(২৬)হারুন আর রশিদ(৪৫) সজীব বেপারী(২৫)নুর অলম(২৭) শাহ আলম(৬০)কে গ্রেপ্তার করে গতকাল জেল হাজতে পাঠিয়েছে। কুরিরচর গ্রামের খলিলুর রহমান, মমতাজ বেগমসহ গ্রেপ্তারকৃতদের স্বজনারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা নিরহ ও গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ । পুলিশ ঘটনার পর কুরিরচরের রাস্তা থেকে লোকজনকে ধরে নিয়ে চালান দেয়। তারা কেউই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।
গতকাল রবিবার দুপুর সোয়া ১২টায় গ্রামে ঢুকতে দেখা যায় নলগোড়া- কুরিরচর সড়কে পুলিশ টহল চলছে এবং কুরিরচর গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গ্রামের রাস্তা ঘাট এবং বাড়িগুলেতে কোন পুরষ দেখা যায়নি। বেপারী বাড়ি ঢুকতেই দেখা যায়, দুই মহিলা ঘর ছেড়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নির্ভয়ে সাংবাদিক তাদের কথা শুনতে বললে তারা ফিরে আসেনি। মঞ্জুর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় দুই মহিলা ভাঙ্গা চোরা ঘর ঝাড় দিচ্ছেন। এসময় পরিচয় জানতে চাইলে তাদের চোখে মুখে দেখা যায়, আতঙ্কের ছাপ। তারা কোন কথা বরতে রাজি হননি।
৭১ নং কুরিরচর সাইক্লোন সেন্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী নেই। লাইব্রেরীতে বসে শিক্ষক মো. জিয়াউল ইসলাম, শাবরিনা শারমিন ও মহীমা কনি। তারা জানান, তাদের বিদ্যালয়ে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী কিন্তু গতকালের ঘটনায় ভীত সন্ত্রস্থ শিক্ষার্থীরা কেহই স্কুলে আসেন নাই। একই কথা জানালেন ৭০ নং কুরিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুরিরচর নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষকগন। শিক্ষক মো. রহমাতুল্লাহ ও আশা লিপি বলেন, গ্রামটি এখনও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি, অজানা হামলা ও গ্রেপ্তার ভয়ে মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ । অপরিচিত মানুষ দেখলেই মহিলা পুরুষ দৌড়ে পালায়। আমরা শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আতঙ্কমুক্ত করে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহন করেছি।
গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মো. লুৎফর রহমান জানান, তাদের নেতাকর্মিদের ৩০টি মটরসাইকেল ভাঙচুর ও পুরিয়ে দেওয়ার পরে ৫/৬টি মটরসাইকেল নিখোজ রয়েছে। পুলিশ জানায়, গতকাল রবিবার দুপুর ১টায় কুরিরচর নিজাম সরদারের বাড়ির পাশে পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকা ভাঙচুরকৃত একটি মটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসী হামলা ও পুলিশের ভয়ে পুরো গ্রামটি পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে তারপরেও মহিলাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
অপর দিকে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটের ঘটনায় মঞ্জুর হোসেন বাদি হয়ে গতকাল রবিবার বরিশাল অতিরিক্ত জুৃডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ফারুক হোসেন মোল্লা, সরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের নেতা মো. জাকির হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা সোহরাব হোসেন, মেজবা উদ্দিন সবুজ, মেহেদী হাসান, মো. মেজবা উদ্দিন আকন, মনিরুজ্জামান সরদার, যুবলীগ নেতা জুয়েল মৃধা, এমদাত মৃধাসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মিদের।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন মিলন বলেন, গ্রামে কোন আতঙ্ক নেই, স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। নিরহ কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, যারা তা-ব চালিয়েছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।