গৌরনদী
উজিরপুরে গাছের সাথে বাসের ধাক্কা নিহত-১০,আহত-২০
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের বামরাইল সানুহারের মাঝখানে বামরাইল এলাকায় রোববার সকালে চালক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মেহগনি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে ঘটনাস্থলেই ১০ জন ও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনসহ ১০ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের ৭ জনকে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৭ জনকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ৬জনকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও ৪ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু ও একজন নারী রয়েছে।
স্থানীয় লেঅকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসের আহত যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ভান্ডারিয়াগামি নৈশ কোচ যমুনা পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-১৫-৯০৪৬) রোববার সকাল সাড়ে ৫ টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের বামরাইল সানুহারের মাঝখানে বামরাইল আইয়ুব আলী হাওলাদারের বাড়ির সামনে পৌছলে চালক ঘুমিয়ে পড়লে বাসটি নিয়ন্ত্র হারিয়ে সড়কের পূর্ব পাশে মেহগনি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুমরে মুচরে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই ফরিদপুরের নগরকান্দার সুতার বাড়ি গ্রামের আওলাদ আলীর মোল্লার ছেলে সেন্টু মোল্লা (৫০), বাকেরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরকাঠী গ্রামের রমজান আলী (৩৮), ঝালকাঠী জেলার নয়ড়ী গ্রামের মনির হোসেন হাওলাদারের ছেলে আরাফাত হোসেন (৯), মঠবাড়ীয়ার উত্তর ভেচকি গ্রামের কুদ্দুস আকনের ছেলে নজরুল ইসলাম আকন (৩৬) ও তার ভাতিজি মঠবাড়ীয়ার আনোয়ারা বেগম (২৩), বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কাজিরবাদ গ্রামেরমোবারক আলী বেপারীর ছেলে হালিম মিয়া (২৫)ও উজিরপুর উপজেলার মুন্ডুপাশা গ্রামের মনোরঞ্জন শীলের ছেলে মধাব শীল (৪৬) নিহত হন। দূর্ঘটনায় আরো ২০ জন গুরুতরভাবে আহত হন। নিহত ৭ জনের পরিচলয় পাওয়া গেলে ৪ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ বেলাল হোসেন জানান, নিহত ব্যক্তিদের লাশ স্বজনদের আবেদন মতে চিকিকৎসকের মৃত সনদ পেয়ে পরিচয় পাওয়ার পরে লাশের ময়না তদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত বাসযাত্রী উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন তালেব আলী (৪৫) বলেন, গাড়ির চালক বেপরোয়া গড়িতে গাড়ি চালাচ্ছিল। মাঝে মাঝে গাড়ির চালক তন্দ্রায় পড়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলছিল কিন্তু তাৎক্ষনিকভাবে আবার নিয়ন্ত্র নেন। এভাবে কয়েকবার ঘটনার পরে যাত্রীরা চালককে সাধবান করে সুস্থ্য ও ঠান্ডা মাথায় গাড়ি চালাতে বলে বলে কিন্তু চালক যাত্রীদের কথায় কর্নপাত করেনি। সকাল সাড়ে ৫ টায় উজিরপুরে বামরাইলে পৌছলে আকস্মীকভাবে চালক নিয়ন্ত্র হারিয়ে ফেলে স্বজোরে মেহগনি গাছের সাথে ধাক্কা খান। এ সময় গাড়ির যাত্রীদের চিৎকার শুরু হয়। আমার আশপাশে একাধিক যাত্রী বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করতে করতে আমার চোখের সামনে মারা যান। পরে দূর্ঘটনা কবলিত এলাকার মানুষ ছুটে এসে আহত নিহতদের উদ্ধারে চেষ্টা চালায়। দূর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উজিরপুর উপজেলার বামরাইল গ্রামের মোঃ জাকির হোসেন (৫২) বলেন, আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে সানুহার বাসষ্টান্ডের দিকে যাওয়ার পথে দেখলাম বাসটি আচমকা সড়কের বাইরে চলে যাচ্ছে । মুহুর্তের মধ্যে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমরে মুচরে দলামোজা হয়ে গেছে। পরে এলাকাবাসি আহত ও নিহতদের উদ্ধার শুরু করে। পরে গৌরনদী ও উজিরপুর ফায়ার সার্ভিস উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ উদ্ধার কাজে যোগদান করে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে।
উজিরপুর ফায়র সর্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ: রাজ্জাক মোল্লা বলেন, খবর পেয়ে সকাল ৬টায় ঘটনাস্থলে পৌছে বাসটি কেটে তার মধ্যে আটকে থাকা আহত যাত্রী ও নিহত ৮ জনের মরাদেহ উদ্ধার করা হয়। গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ বেলাল হোসেন বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে লাশ মর্গে রাখা হবে। এ ঘটনায় গৌরনদী হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মোঃ মাহাবুব বাদি হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।