গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় নিহত-১, মামলা দায়ের-গ্রেপ্তার ৩
নিজস্ব প্রতিবেদক, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের ভ্যান চালক ও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থক মোঃ মোকলেস মিয়া (৫৫) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার আগৈলঝাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানান, গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়ন পাঁচটিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। ১১ নভেম্বর সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন শামীম হোসেন ওরফে লিকচান (আপেল) ও মোঃ ইউনুস মিয়া (টিউবওয়েল)। নির্বাচনে শামীম হোসেন ওরফে লিকচান (আপেল) বিজয়ী হন।
বিজয়ী সদস্য শামীম হোসেন ওরফে লিকচান অভিযোগ করে বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ায় পরাজিত প্রার্থী ইউনুস মিয়া ক্ষিপ্ত হন এবং আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ১৩ নভেম্বর সকালে আমি আমার কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের সাথে দেখা করে আমার সমর্থক ও ভ্যান চালক মোকলেস মিয়ার (৫৫) ভ্যানে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে খাজুরিয়া গ্রামে পৌছলে পরাজিত প্রার্থী ইউনুস মিয়ার নেতৃত্ব খাজুরিয়া গ্রামের করিম ফকিরের ছেলে রিপন ফকির, স্বপন ফকির, শাহআলম ফকিরের ছেলে হাফিজুল ফকির, খালেক ফকিরের ছেলে হাসান ফকির, মোজাফর ফকিরের ছেলে মামুন ফকির, দেলোয়ার ফকিরের ছেলে বায়জীদ ফকির ও সোনমদ্দি ফকিরের ছেলে ছরোয়ারসহ ৩০/৩৫ জন সন্ত্রাসী সমর্থক লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় ভ্যান চালক মোকলেমসহ ৪/৫ জন আহত হয়। আহতদের আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভ্যান চালক মোকলেস মারা যান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরন করেছে।
নিহত ভ্যান চালকের ছেলে উজ্জল মিয়া (২০) অভিযোগ করে বলেন, পরাজিত প্রার্থী ইউনুস মিয়া নির্বাচনের আগে বাবাকে তার দল করতে প্রস্তাব দেয় কিন্তু বাবা তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এতে ইউনুস মিয়া ক্ষিপ্ত হন এবং পরিকল্পিতভাবে বাবাকে হত্যা করেছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ডা. সৈকত জয়ধর এ প্রসঙ্গে বলেন, মাথায় আঘাত জনিত কারনে আহত ভ্যান চালক মোকলেস মিয়া মারা গেছেন। নিহত মাকলেস মিয়ার স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, ইউনুস মিয়াকে সমর্থন না করায় প্রতিহিংসা থেকে আমার স্বামী মোকলেস মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। আমি হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার চাই।
অভিযোগ অস্বীকার করে পরাজিত প্রার্থী মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, বিজয়ী প্রার্থীর উপর হামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না এবং ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। নির্বাচনী প্রতিহিংসা থেকে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেনন, পরাজিত মেম্বর প্রার্থী ইউনুস মিয়ার সমর্থকদের হামলায় বিজয়ী প্রার্থী মো. শামীম মিয়ার সমর্থক ও দরিদ্র ভ্যান চালক মোকলেস মিয়া (৫৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার হাসপাতালে মারা গেছে। এ ঘটনায় মোঃ ইলিয়াস মিয়া বাদি হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ এজাহার নামীয় আসামি তানভীর ইসলাম রাছেল (২৪), এনামুল হাওলাদার (২৬) ও রফিক মিয়াকে (২৪) খাজুরিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাশেম ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সকলকে শান্ত থাকার জন্য এবং নিহতের পরিবারকে শান্তনা দেন।