গৌরনদী
অনুমোদিত এক স্থানের প্রকল্প অন্য স্থানে বাস্তবায়নের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনুমোদিত এক স্থানের প্রকল্প অনিয়মের মাধ্যমে অন্য স্থানে বাস্তবায়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক প্রভাবশালীর সঙ্গে খাতির রক্ষায় উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী এই কাজটি করেছেন বলে সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান, এলাকাবাসি ও সুবিধা বঞ্চিত ভূক্তভোগীরা।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের ভরসাকাঠি, কালিহাতা, ঘন্ডেশ্বর ও দক্ষিন কালিহাতা গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ যাতায়াতের দীর্ঘদিন ধরে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এলাকাবাসি তৎকালীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থীর শরনাপন্ন হয়ে এলাকার সড়টি পাকা করনের দাবি জানান। মহাজোট প্রার্থী মোঃ শাহ আলম তালুকদার নির্বাচিত হলে সড়কটি পাকা করনের ঘোষনা দেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে বরিশাল -২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শাহ আলম তালুকদার ২০১৯ সালে উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের সানুহার কালিহাতা সড়কের চেইনেজ ১৯৮২ থেকে ৪০০০ পর্যন্ত এক কিলোমিটর সড়ক পাকাকরনে প্রকল্প তৈরী করতে উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন। ২০২০ উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ “ বরিশাল-ঝালকাঠি ও পিরোজপুর উন্নয়ন প্রকল্পের” (বিজিপি) অধীনে ৮৯ লাখ ৮৯ হাজার ৮শত টাকার একটি প্রকল্প তৈরী করে বরিশাল নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরে তা অনুমোদনের পাঠান (যার আইডি নং-৫০৬৯৪৪০১০)। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে তা তা বাস্তবায়নের আদেশ দেন কর্তৃপক্ষ।
এলাকাবাসির লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের সানুহার কালিহাতা সড়কের চেইনেজ ১৯৮২ থেকে ৪০০০ পর্যন্ত এক কিলোমিটর সড়ক পাকাকরনে প্রকল্পটি নাম-আইডি নম্বর কাগজপত্রে ঠিক থাকলে উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মাহিদুল ইসলাম অনিয়মের মাধ্যমে প্রকল্প স্থান পরিবর্তন করে “সানুহার আর এ্যান্ড এইচ কালিহাতা রোড ভায়া আব্দুল খালে সিকদারের বাড়ির জামে মসজিদ পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরনে গত আগষ্ট মাসে দরপত্র আহবান করেন (দরপত্র আহবান আইডিনং -৫৯৩২৫৩)। ১৭ আগষ্ট দরপত্র বিক্রির শেষ দিন এবং ১৮ আগষ্ট দরপত্র জমা দেয়া হয় । বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিয়মবর্হিভুতভাবে এক স্থানের প্রকল্প অনিয়ম ও দূর্নীতি করে তা বাস্তবায়নে পায়তারা করা হচ্ছে। অনতিবিলম্বে প্রকল্পটি যথাযথ স্থানে বাস্তবায়নের জন্য তারা দাবি জানান।
বামরাইল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মাহিদুল ইসলাম এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে খাতির রক্ষার জন্য অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে এক স্থানের নামে অনুমোদিত প্রকল্প আরেক স্থানে বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ৪ গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ও স্বপ্ন প্রকল্প সড়ক পাকাকরন না করে নিয়মবর্হিভুতভাবে অন্যস্থানে প্রকল্প বাস্তয়বন যে কোন মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষনা দেন তিনি। কালিহাতা কেবিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের ভরসাকাঠি, কালিহাতা, ঘন্ডেশ্বর ও দক্ষিন কালিহাতা গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটি। এই সড়কটি পাকাকরন এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। এ ছাড়াও সড়কটি দিয়েই কালিহাতা গ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন কারিহাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভরসাকাঠি সাইক্লোন সেন্টার, ঘন্ডেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খলিফাবাড়ি নুরানী মাদ্রাসার সহ¯্রাধিক ছাত্র ছাত্রী কালিহাতা কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগী, মানিক বাজার ও মুক্তিযোদ্ধা বাজারে নিত্য দিনের প্রয়োজন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। বর্ষা মৌসুমে তাদের চরম ভোগান্তি ও দূর্ভোগ পোহাতে হয়। অনুমোদিত নির্ধারিত প্রকল্প স্থানেই সড়কটি পাকাকরনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান।
ঘন্ডেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে সড়কটিতে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। ছোট ছোট শিশুরা জীবনের ঝুকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। জেলা ও উপজেলা সদরে যাতায়াতে সাধারন মানুষকে বছরের পর বছর দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকার মানুষের প্রানের দাবি পুরনে আমরা দীর্ঘদিন সাংসদ ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধর্না ধরে সড়কটি পাকাকরনের প্রকল্প অর্ন্তভূক্ত হয়েছে তার বিরুদ্ধে যে কোন ষরযন্ত্র প্রতিহত করা হবে। অনুমোদিত স্থানে প্রকল্প গ্রহন না করা হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বামরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইউসুফ হোসেন স্থান পরিবর্তনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অনুমোদিত সড়ক “উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের সানুহার কালিহাতা সড়কের চেইনেজ ১৯৮২ থেকে ৪০০০ পর্যন্ত এক কিলোমিটর সড়ক পাকাকরনের প্রকল্প” বাস্তবায়ন করার জন্য আমি প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অনুরোধ করে পত্র প্রেরন করেছি।
অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাহিদুল ইসলাম প্রভাবশালীর সঙ্গে খাতির রক্ষার বিষয়টি প্রত্যখান করে বলেন, অনুমোদনের জন্য দুটি প্রকল্পই পাঠানো হয় কিন্তু টেন্ডার আইডির ভূলবসত সমস্য সৃষ্টি হয়েছে । প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার নির্বাচিত করে কার্যাদেশ দেওয়া প্রক্রিয়া সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত নেওয়া হবে।