গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় ধর্ষিতাকে সালিস মিমাংসার বাধ্য করার অভিযোগ, সাদা ষ্টাম্পে স্বাক্ষর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের অগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের নাগিরপাড় গ্রামের দশম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ধর্ষন করা হয়। ধর্ষিতার পরিবারের অভিযোগ ধর্ষককে রক্ষায় ধর্ষন মামলা প্রত্যাহারে ধর্ষিতাকে প্রহসনের সালিস মিমাংসায় বাধ্য করা হয়েছে। ধর্ষিতা ও তার বাবার কাছ থেকে সাদা ষ্টাম্পে স্বাক্ষর গ্রহন করা হেেছ। সালিসদের রায়ে ধর্ষিতার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। অপরদিকে মামলা রুজু করতে আদালতের নির্দেশ গতকাল মঙ্গলবার আগৈলঝাড়া পৌছে বলে পুলিশ জানান।
স্থানীয় লোকজন, ধর্ষিতার পরিবার, মামলার বিবরন ও পুলিশ জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার নাঘিরপাড় গ্রামের হতদরিদ্র এক দিনমজুর বাবার দশম শ্রেনীতে পড়–য়া কন্যাকে গত ৫ জুলাই জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে একই গ্রামের আমরী মন্ডলের পুত্র দুলাল মন্ডল। এ সময় ধর্ষিতার ডাকচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ধর্ষককে হাতেনাতে আটক করে মারধর করে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে ধর্ষকের প্রভাবশালী অভিভাবক এসে বিচারের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষককে ছাড়িয়ে নেন। পরের দিন ৬ জুলাই ধর্ষিতার বাবা তার কন্যাকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে থানা পুলিশ মামলার জন্য আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ধর্ষিতার বাবা বাদি হয়ে গত ১৩ জুলাই বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষন মামলা দায়ের করেন। ওই দিন বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশকে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ প্রদান করেন।
ধর্ষিতার বাবা জানান, মামলা দায়েরের পর ধর্ষক দুলাল ম-লের অভিভাকরা ধর্ষিতার তার কাছে গিয়ে ধর্ষিতা কনেকে ধর্ষক দুলালের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়ে মিমাংসার জন্য চাপ দেন। এতে তিনি রাজি না হলে তাকে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেন। হুমকির মুখে বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলামের উদ্যোগে গত ১৬ জুলাই সকাল ১১টায় নাগিরপাড় কালি মন্দীরে এক সালিস বৈঠকের আয়োজন করা হয়। চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সালিস বৈঠকে সাত সদস্যর সালিশ বোর্ড গঠণ করা হয়। সালিশ বোর্ডের সদস্যরা হলেন, বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এ,আর ফারুক বক্তিয়ার, ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি কাসেম বক্তিয়ার, নাঘিরপাড় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আবুল বাশার, স্থানীয় গন্যমান্যব্যাক্তি সিরাজুল ইসলাম, দিলীপ বাড়ৈ ও ধর্ষক পরিবারের একজন সদস্য। এছাড়া সালিস বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ধর্ষক দুলাল মন্ডল, তার বাবা আমরী মন্ডল, ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী ও তার বাবা, ইউপি সদস্য কালাম হাওলাদার, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রেনুকা অধিকারী, সাবেক ইউপি সদস্য কুমোদ রায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সালিস বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সালিস জানান, স্বল্প সময়ে সালিসের নামে ধর্ষিতার সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে। সালিস শুরুর আগেই চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ধর্ষিতার হতদরিদ্র বাবা ও ধর্ষিতাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হুমকি ধামকি দিয়ে ৩’শ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় করেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানসহ সালিশ বোর্ডের ওই সাত সদস্য আলাদাভাবে আলোচনা করে সংখ্যাগরিষ্টতার ভিত্তিতে ধর্ষকের দেড় লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। পরবর্তীতে ধর্ষকের পক্ষ থেকে জড়িমানার টাকা কমানোর আবেদন করলে সালিশগন ২০ হাজার টাকা কমিয়ে ধর্ষককে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জড়িমানা করেন এবং ওই আগামি শুক্রবারে মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেন। সালিস বৈঠকে তাৎক্ষনিকভাবে জড়িমানার আংশিক টাকা আদায় করে আওয়ামী লীগ নেতা এ,আর, ফারুক বক্তিয়ারের কাছে জমা রাখা হয়। ধর্ষিতার স্বজনরা অভিযোগ করেন, ধর্ষিতার পরিবার হতদরিদ্র ও অসহায় এ সুযোগে প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক প্রহসনের সালিশ বৈঠক করে ধর্ষককে বাঁচাতে নিজেদের ইচ্ছামত রায় ঘোষনা করেন। তারা বিচারের দাবিতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনসহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সহায়তার আবেদন করেন।
অভিযোগের ব্যপারে ধর্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ধর্ষকের পিতা আমরী ম-ল বলেন, ধর্ষনের কোন ঘটনা ঘটেনি, মিথ্যা অভিযোগ হয়রানীর চেষ্টা চালানো হলে গ্রামের মাতুব্বরা মিমাংসা করে দেন। ধর্ষন মামলার সালিস মিমাংসার ধর্ষিতা ও তার পরিবারকে বাধ্য করার অভিযোগ সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধর্ষনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে ধর্ষনের অভিযোগে আদালতে মামলা করার পরে এলাকায় আইন শৃংখলা অবনতির আশংকায় উভয়ের মতামতের ভিত্তিতে মিমাংসা করা হয়েছে। ভয়ভীতি হুমকি দিয়ে বাধ্য করার অভিযোগ সত্য নয়।
এ প্রসঙ্গে অগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুের মামলার আদেশ হাতে পেয়ে ধর্ষক দুলাল ম-লকে আসামি করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে এবং আজ বুধবার ধর্ষিতাকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য বরিশাল পাঠানো হবে।