গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় গৃহবধূকে নির্যাতন করে আটকে রাখার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পাকুরিতা গ্রামের যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন অমানবিক নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বৃহস্পতিবার রাতে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালয় গৃহবধূ। অসুস্থ্য গৃহবধূকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না নিয়ে ঘরে মধ্যে ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে । এ ঘটনায় নির্যাতিতার মামা সমীর জয়ধর (৪৫) বাদি হয়ে শুক্রবার আগৈলঝাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা করেছে।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ গৃহবধূর স্বজনরা জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের আস্কর গ্রামের নিখিল অধিকারীর মেয়ে সমাপ্তি অধিকারীর (১৯) ৮ মাস পূর্বে একই ইউনিয়নের পাশ্ববর্তি পাকুরিতা গ্রামের বীরেণ সুতারের ছেলে বিজন সুতারের (২২) সঙ্গে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় কনের বাবা বড়কে প্রায় তিন লাখ টাকার যৌতুক দেন। পরবর্তি কিছু দিন যেতে না যেতেই গৃহবধূকে আরো যৌতুকের জন্য চাপ দেন বিজন সুতার ও তার পরিবারের সদস্যরা। সমাপ্তি অধিকারী জানান, বিয়ের পরে ৮ মাস অতিবাহিত হলেও বিয়ের শুরু থেকেই তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে যৌতুকের দাবিতে মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল।
সমাপ্তি অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের মানুষিক ও শারীরিক অত্যচারে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আর সহ্য করতে পারছি না। সামান্য কোন ঘটনা ঘটলেই তারা আমাকে বলে দাবি পুরন করতে পারবি না তো মরিস না কেন? তারা প্রায়ই আমাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে আসছিল। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতে যৌতুক চাওয়া নিয়ে স্বামী বিজনের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আমাকে স্বামী ও পরিবারের লোকজন মিলে বেদমভাবে মারপিট করেছে। এ সময় আমাকে বলে মরতে পারিস না। এতে ঘৃনায় আমি বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। এ সময় আমার স্বামী বিজন, শ্বশুর বীরেণ সুতার, শ্বশুড়ী রীনা সুতার ও ননদ বন্যা সুতার আমাকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে ঘরের মধ্যে প্রায় ৫ ঘন্টা আটকে রাখে। আমি আত্মহত্যা করেছি বলে বাবার বাড়িতে সংবাদ পাঠায়। আমার বোন সীমা অধিকারী বোন জামাতা মিঠুন মালাকার খবর পেয় এসে আমাকে উদ্ধার করে আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিতে গেল স্বামী বিজন ও তার বাবা বীরেণ সুতার তাদের (বোন ও বোন জামাতাকে) বেদমভাবে মারধর করে। পরে রাত ২টার দিকে স্থানীয় লোকজন তাদেরসহ আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নির্যাতিতা সমাপ্তির বোন সীমা অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, বোনের আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমি আমার স্বামীসহ বোনের স্বামীর বাড়িতে পৌছে দেখি বোন মারা যায়নি কিন্তু গুরুতরভাবে অসুস্থ্য। তখন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে চাইলে ভগ্নিপতি বিজেন পরিবারের লোকজন নিয়ে আমাদের মারধর করে আটকে রাখে । পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশকে অবহিত করে এবং আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আলা আমিন হোসাইন বলেন, কীটনাশক পানে অসুস্থ গৃহবধুকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংকাটপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আাসেন স্বজনরা। চিকিৎসাধীন নারী বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ্য এবং বিপদমুক্ত রয়েছে । অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজেন সুতার মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বিজেন সুতার বাবা বীরেন স্যূতার গৃহবধূকে নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার কথা অস্বীকার করে বলেন, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়েছে এইটুকু জানি তবে কি নিয়ে তা জানি না। নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক নয়।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, নির্যাতনের শিকার গৃহবধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতিতার মামা সমীর জয়ধর বাদি হয়ে সমাপ্তির স্বামী বিজেন সুতার, শ্বশুর বীরেণ সুতার, শ্বশুড়ী রীনা সুতার ও ননদ বন্যা সুতারকে আসামি করে শুক্রবার দুপুরে আগৈলঝাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।


