গৌরনদী
গৌরনদীতে ঢাকা মুখি মানুষের জনস্রোত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১ আগষ্ট শিল্প কল কারখানা খুলে দেওয়ার সরকারি ঘোষনায় শনিবার বরিশালের গৌরনদীতে ঢাকা মুখি মানুষের জনস্রোত দেখা গেছে। দক্ষিানাঞ্চলের মানুষের ঢাকা যাওয়ার এক মাত্র সড়ক পথ ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্টান্ডে হাজার হাজার ঢাকা মুখি মানুষ রিকসা ভ্যান, পায়ে হেটে এসে মাহেন্দ্র ও টেম্পু যোগে গৌরনদী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এতে করেনা মহামারীর স্বাস্থ্য বিধি ও লকডাউনের বালাই নেই। এমন কি মাক্সও ব্যবহার করছেন ঢাকাগামি যাত্রীরা।
সরেজমিনে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহামারী করোনা প্রতিরোধে আসছে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন পালনের আদেশ থাকলে বরিশালের গৌরনদীতে তা মানছেন না। ১ আগষ্ট শিল্প কল কারখানা খুলে দেওয়ার সরকারি ঘোষনায় শনিবার বরিশালের গৌরনদীতে ঢাকা মুখি মানুষের জনস্রোত দেখা গেছে। দক্ষিানাঞ্চলের মানুষের ঢাকা যাওয়ার এক মাত্র সড়ক পথ ঢাকা -বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্টান্ডে হাজার হাজার ঢাকা মুখি মানুষ রিকসা ভ্যান, পায়ে হেটে এসে মাহেন্দ্র ও টেম্পু যোগে গৌরনদী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। মহা সড়কে দুর পাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মী। জীবিকার একমাত্র অবলম্বন চাকুরী বাঁচাতে ১ আগষ্ট কর্মস্থলে যোগ দিতে তাদের ঝুকি নিতে হয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা জানান।
দুপুর ১১টায় গৌরনদী বাসষ্টান্ডে কথা হয় গার্মেন্টস কর্মী দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নার্গিস মসুলতানা (৩৪), কাওছার হোসেন (২৩), শিপলু খান (২২)র সঙ্গে। তারা বলেন, সরকার মোগো গরীবদের ভোগান্তি আর দূর্ভোগ দিতেই পছন্দ করে। স্বাস্থ্য বিধির কথা বলে ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠাল আবার এ্যাহন হঠাৎ গার্মেন্টস খোলার ঘোষনা দিল। দুরপাল্লার বাস ফেরি সব কিছু বন্ধ কি মোরা ঢাকা যামু এবং কাজে যোদ দিমু। এ সময় আব্দুল কাদের নামে এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, মুই ঝালকাঠি থেকে ভ্যানে ভ্যানে গৌরনদীতে পৌছেছি। এখান থেকে টেম্পুতে, কখনো ভ্যানে কখনো পায় হেটে ঢাকা পৌছতে হবে। এতে ঢাকা পৌছতে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হবে। নারী কর্মী মমতাজ বেগম (২৪) বলেন, মোগো কপালে সুখ নাই। লকডাউনে ঘরে থাইক্যা না খাইয়া মরি, আবার গার্মেন্টস খোলার ঘোষনা করোনার ঝুকি নিয়া বাড়ি থাইক্যা ঢাকা রওয়ানা হইছি। কহন যাইয়া পৌছতে পারমু জানি না। ঢাকা যাওয়ার টাকা নাই ধার দেনা কইররা ভাড়ার টাহা লইয়া রওয়ানা হইছি কিন্তু রাস্তাঘাটের যা অবস্থা ওই টাহা দিয়া ঢাকা যাইয়া পৌছতে পারমু কি না হেইয়াও জানি না। প্রত্যন্ত পল্লি আগৈলঝাড়ার আমবৌলা গ্রামের দিলদার হোসেন (২৪), মুনিয়া আকতার (২০)সহ কয়েকজন বলেন, মোগো বাড়ি থেকে গৌরনদী আসতে ১শত টাকা লাগত কিন্তু আজকে তিন শত টাকা লাগছে এমনিভাবে শত শত গুন বেশী ভাড়া দিয়ে রিকসা-ভ্যান টেম্পু ,নৌকা নিয়ে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করে ঢাকা পৌছতে হবে।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে সবাইকে সুস্থ্য থাকতেই স্বাস্থ্য বিধি ও লকডাউন মানতে হবে। এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়েই আমরা মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাঠে কাজ করছি। ঢাকা মুখি মানুষের জনস্রোত সম্পর্কে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শিল্প কল কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষনায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জীবিকার তাগিদে ঢাকা মুখি হতদরিদ্র মানুষের উপরে মানবিক কারনে ওই ভাবে আইন প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। তারপরেও যাতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে মাক্স পরে সাবধানতার সঙ্গে চলাচল করে সেজন্য প্রশাসনের অভিযান অব্যহত রয়েছে।