গৌরনদী
উজিরপুরে হাতুরে চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যু, চিকিৎসক পলাতক
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লি জল্লা ইউনিয়নের পীরেরপাড় গ্রামে শনিবার রাতে হাতুড়ে চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গছে। এ ঘটনায় মৃত যুবকের স্ত্রী উর্মিলা সরকার (২৬) বাদি হয়ে হাতুড়ে চিকিৎসক বাসুদেব মালাকারের (৩৫) বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার পর থেকে চিকিৎসক পলাতক রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের পীরেরপাড় গ্রামের কাঠের ফার্নিসার ব্যবসায়ী নিখিল সরকার (৩০) শনিবার রাত ৮টার দিকে এলার্জিজনিত সমস্যায় অসুস্থ্য হয়ে পরে। এ সময় রোগী নিখিল সরকার বাহেরঘাট গ্রামের উমেশ মালাকারের পুত্র ও জল্লা লোকনাথ বাজারের পল্লি চিকিৎসক বাসুদেব মালাকারকে (৩৫) ফোন দিয়ে বাড়িতে আসতে বলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসক বাসুদেব মালাকার রোগীর বাড়িতে পৌছেন। এ সময় রোগী নিখিল সরকার পল্লি চিকিৎসক বাসুদেব মালাকারকে তার এলার্জিজনিত সমস্যায় শরীর ফুলে যাওয়া ও অসহ্য চুলকানির কথা জানান । নিহত নিখিল সরকারের স্ত্রী উর্মিলা সরকার জানান, চিকিৎসক বাসুদেব মালাকার রোগীর সব শুনে রোগীর শরীরের শিরায় একাধারে ইসোটিট-৪০, কটসন, টেমসিলিন ও অন্ডাশ্রম ইনজেকশন পুশ করলে সঙ্গে সঙ্গে রোগী প্রান হারায়। উর্মিলা অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আমার স্বামী মারা গেছে। ডাক্তার আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী বলেন, ওই হাতুরে চিকিৎসক নিঃসন্দেহে ভূল চিকিৎসা করেছে। প্রথমত সে রোগীর অসুস্থ্যতার কারন শনাক্ত ছাড়াই চিকিৎসা করেছে। কারন শরীর ফুলে যাওয়ার এলার্জি-কিডনিসহ একাধিক কারন থাকতে পারে। চিকিৎসক যদি এলার্জির চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তাহলে রোগীকে কটসন ও টেমসিলিন ইনজেকশন এক সঙ্গে পুশ করা যাবে না। হয়তো ওই দুটি ইনজেকশন এক সঙ্গে পুশ করার কারনে রোগী সঙ্গে সঙ্গে মারা গিয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া ওই দুটি ইনজেকশন রোগীর প্রকারভেদে কখনো কখনো শিরায় পুশ করা যাবে না। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে চিকিৎসক বাসুদেব মালাকারকে খুজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান ঘটনার পর থেকে মুঠোফোন বন্ধ করে বাসুদেব বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বাসুদেবের স্ত্রী ভাষানী মালাকার (৩০) এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার স্বামী তিন বছর ধরে ডাক্তারী করছে আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কি হয়েছে আমি বলতে পারবো না।
উজিরপুর জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য উপেন সরকার (৬০) ও স্থানীয় দীপেন বিশ্বাস (৪৮) বলেন, বাসুদেব মালাকার খেত-খামারে দিনমজুরের কাজ করত। পরে একটি রাইস মিলে ধান ভাঙ্গার কাজ করত। গত তিন বছর হয় লোকনাথ বাজারে একটি ফর্মেসী দিয়ে বসে। কিন্তু সে চিকিৎসক তা আমরা জানতাম। বাসুদেব মালাকার ভূয়া চিকিৎসক সেজে ভূল চিকিৎসা দেয়ার কারনে যুবক নিখিল মারা গেছে। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী বলেন, খোজ নিয়ে জানা গেছে বাসুদেব মালাকারের ফার্মেসী ব্যবসার কোন লাইসেন্স নেই এবং সে একজন ভুয়া চিকিৎসক। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আরশেদ বলেন, মৃত যুবকের স্ত্রী উর্মিলা সরকার (২৬) বাদি হয়ে হাতুড়ে চিকিৎসক বাসুদেব মালাকারে (৩৫) বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে আইনগত পয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।