বরিশাল
উজিরপুরে ভূয়া ও জাল সনদ দিয়ে আওয়ামীলীগ নেত্রীর চাকুরী, ৮ বছর পর শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলা সদরের উজিরপুর শের ই বাংলা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও উজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সুরাইয়া ইসলাম (৪০) ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভূয়া ও জাল সনদ দিয়ে চাকুরী নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গছে। সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া ইসলাম একইসঙ্গে উজিরপুর পৌর সভার সংরক্ষিত ১,২ ও৩ নংওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন । এ ঘটনায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদি হয়ে গতকাল মঙ্গলবার উজিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া আক্তার গত ৮ বছর চাকুরী কালীন সময়ে সরকারি তহবিল থেকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা স্কুল তহবিল থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। একই সঙ্গে পৌর কাউন্সিলর হিসেবে গত ৫ বছরে প্রায় ৫ লাখ ৩১ হাজার টাকার ভাতা ভোগ করেছে। দাপুটে এ আওয়ামীলীগ নেত্রীর ভয়ে এখনো মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না আওয়ামীলীগের নেতারা।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষর (এনটিআরসিএ) সূত্রে জানা গেছে, উজিরপুর শের ই বাংলা পাইলট গত ২০ অক্টোবর সহকারী শিক্ষক (উদ্ভিদ বিজ্ঞান) সুরাইয়া ইসলামের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইর জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষর (এনটিআরসিএ) কাছে আবেদন করেন উজিরপুর শের ই বাংলা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান । এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ সহকারী শিক্ষক (উদ্ভিদ বিজ্ঞান) সুরাইয়া ইসলামের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাই করলে ভূয়া ও জাল সনদ দিয়ে চাকুরী নেওয়ার বিষয়টি ধরা পরে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষর (এনটিআরসিএ) সহকারী পরিচালক (পমূপ্র-৩) তাজুল ইসলামের গত ১১ নভেম্বর স্বাক্ষরিক চিঠিতে বলা হয়, মোঃ আলাউদ্দিন আকনের কন্যা সুরাইয়া ইসলাম ২০০৭ সালের তৃতীয় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার রোল নং-৬১১৬০০২৬, রেজিষ্ট্রেশন নং-৭০১২২৭২ সনদ দিয়ে চাকুরী নেন। সনদটি সঠিক নয়, সনদটি জাল ও ভুয়া। ওই রোল ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বরের প্রকৃত সনদধারীর নাম আবুল হাসনাত মোঃ রাসেল, পিতা গোলাম হোসাইন। সনদধারী সুরাইয়া ইসলাম জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে দালিলিকভাবে প্রমানিত হয়েছে বিধায় উক্ত জাল ও ভূয়া সনদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের পূর্বক অত্র অফিস অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া গেল।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, উজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদ সদস্য এস,এম জামাল হোসেন জানান, এনটিআরসিএ সহকারী পরিচালকের চিঠি পাওয়ার পরে গত শুক্রবার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতি সিদ্বান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমানকে বাদি হয়ে সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উজিরপুর মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, জাল ও ভূয়া সনদ দিয়ে চাকুরী নেওয়ায় সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া ইসলামের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বাদি হয়ে গতকাল মঙ্গলবার একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার বাদি এজাহারে বলেন, সুরাইয়া ইসলাম সহকারী শিক্ষক পদে (উদ্ভিদ বিজ্ঞান) নিয়োগ পাওয়ার জন্য ২০১২ সালের ২৮ মার্চ আবেদন করেন। ১১ মে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭ জন প্রার্থী অংশ নেন। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় নির্বাচনী বোর্ড সুরাইয়া ইসলামকে নিয়োগ প্রদানে ম্যানেজিং কমিটিকে সুপারিশ করে। ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্বান্ত মোতাবেক ১৫ মে সুরাইয়া ইসলামকে নিয়োগ দেন। ২০১২ সালের ১ নভেম্বর সুরাইয়া এমপিভূক্ত হয়ে ৩১ অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত চাকুরী করার পরে চলতি মাসে জাল ও ভূয়া সনদ দিয়ে চাকুরী নেওয়ার বিষয়টি ধরা পরে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, দাপুটে আওয়ামীলীগ নেত্রীর সঙ্গে দলের শীর্ষ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির উঠ-িবসা ও ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় সে দাপুটে নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই ওই সব নেতাদের সরাসরি হস্তক্ষেপে ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভূয়া ও জাল সনদ দিয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী নেন। অনেনে বিষয়টি জানলেও ভয়ে তা প্রকাশ করেনি। তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সনদ যাচাইর কথা নয়, শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশে কমিটি নিয়োগের সিদ্বান্ত দিয়েছে। ইন্টারভিউ গ্রহনকারী নির্বাচনী বোর্ড ও নিয়োগ দাতা প্রধান শিক্ষকের সনদ যাচাইর দায়িত্ব ছিল। আমি উপজেলঅ চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকলে নিয়োগে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব ছিল।
বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া আক্তার গত ৮ বছর চাকুরী কালীন সময়ে প্রায় ২৪ লাখ টাকা সরকারি আর্থিক সুবিধা ও স্কুল তহবিল থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা সুবিধাভোগ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উজিরপুর পৌর সভার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পৌর কাউন্সিলর হিসেবে সুরাইয়া ইসলাম প্রায় ৫ লাখ টাকা সম্মানী ভাতা গ্রহন করেছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলে তার ফেঅন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তি বক্তব্য আনতে তার বাসায় গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এলাকার অনেকেই বলেন পুলিশ তাকে খুঁজছে বিধায় গ্রেপ্তার এড়াতে আত্ম গোপনে রয়েছে। তার বাবা আলাউদ্দিন আকনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলে জাল ও ভূয়া সদন এবং মামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। মেয়ে আত্মগোপনে কথাটি মনে হয় ঠিক নয়। উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, জাল ও ভূয়া সনদ দিয়ে চাকুরী নেওয়ায় সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া ইসলামের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক বাদি হয়ে গতকাল মঙ্গলবার একটি মামলা দায়ের করেছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। উজিরপুর পৌর সভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দিন বেপারীর কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি এস, এম, জামাল হোসেন বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষর (এনটিআরসিএ) ভূয়া ও জাল সদন শনাক্ত করে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রধান শিক্ষক মামলা করেছে। সুরাইয়া ইসলাম বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী। কোন পদ পদবী নেই। নেত্রীর দাপট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।