গৌরনদী
করোনায় কৃষান সংকট, পাকা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ ফলন দেইখ্যা মনডা ভইররাই যায়। মোগো ক্ষেতে বোরো ধান পাইক্কা রইছে । করোনার লাইগ্যা কোথায়ও ধান কাটার কৃষান পাইতেছি না। ধান কাটা নিয়া মোরা অনেক দুশ্চিন্তায় আছি। এমনিতে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে । ধান ঘরে তুলতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা দায় অইবো। কথাগুলো বলছিলেন বোরো ধান ঘড়ে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রাস্থ বরিশালের বিল হিসেবে খ্যাত প্রত্যন্ত পল্লি আগৈলঝাড়ার আমবৌলা গ্রামের কৃষক জোনাব আলী (৪২)। জোনাব আলীর সঙ্গে শুর মিলিয়ে অনেক কৃষক জানান, এবারে বোরোর ফসল খুব ভালই হয়েছে কিন্তু ধান ঘরে তুলতে পারলে করোনার কারনের বিদ্যমান অভাবকে আরো তীব্রতর করে তুলবে। খাদ্য সংকটে চরমে পৌছবে। কৃষান সংকটে ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিস্তায় আছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া, গৌরনদী ও উজিরপুরের লক্ষাধিক বোরো চাষী।
আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের চলতি বোরো মৌসুমে ৯ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষা করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হযেছে ৪৮ হাজার ১ শত ৪৮ মেট্রিক টন চাল। গৌরনদী কৃষি অফিস জানান, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চলতি বোরো মৌসুমে ৬ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষা করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হযেছে ৩২ হাজার ২শত ৬০ মেট্রিক টন চাল। একাধিক সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, এবারে বোরো কোন রোগ বালাই ছিল না। ফলে ক্ষেতে চলতি বছর ধানের ভাল ফলন হয়েছে। বোরোর ধান পাকা মৌসুমে এ অঞ্চলে ধান কাটতে গোপলগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, শরনখোলা, মোড়লগঞ্জ জেলা-উপজেলার ধান কাটা কৃষানরা আসে। এবারে সুপার ফলন হয়েছে কিন্তু করোনার কারনে বাহিরের কৃষানরা ধান কাটতে না আসায় বিপাকে পড়েছে আগৈলঝাড়া, গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলার লক্ষাধিক কৃষক।
সরেজমিনে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা, চাত্রিশিরা, আমবৌলা, রাজিহার, বাশাইল, বাহাদুরপুর, রতœপুর ও গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর, বাগমারা, বড়দুলালী, চাদশী, মাহিলাড়া, বেজহার, দক্ষিন পিঙ্গলাকাঠী, শংকরপাশা, চর দিয়াশুর, উজিরপুরের সাতলা, হারতা, রাজাপুর, গুঠিয়া, নারায়নপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে জমিতে বোরো ধান পেকে আছে কিন্তু কৃষান সংকট থাকায় ঘরে ফসল তুলতে পারছেন না চাষীরা। কোন কোন জমিতে অতিসম্প্রতি বয়ে যাওয়া বৈশাখী ঝড় হাওয়া ও বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে পানি জমেছে। কিছু কিছু খেতের ধান পানিতে শুয়ে পরেছে। এনিয়ে বড়ই দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষক। ভূক্তভোগী কৃষকরা জানান, প্রতিবছর গোপলগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, শরনখোলা, মোড়লগঞ্জ জেলা-উপজেলার ধান কাটা শ্রমিক আসত। এবারে করোনার কারনে বাহিরের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটতে কৃষক আসতে না পারায় ধান ঘরে তোলা নিয়ে তারা বিপাকে পরেছে। ফসল ঘরে দুশ্চিন্তাই ঘুম নেই ! এমন ভাবনা তাদের দূর্বল করে ফেলছে । ভাল ফলনের আনন্দ কৃষান সংকটে ¤øান হয়ে গেছে। আগৈলঝাড়া উপজেলার কান্দিরপাড় গ্রামের আনিস সরদার জানান, কৃষানের অভাবে মোর ৪০ শতাংশ জমির ধান পাইক্কা জমিতে নষ্ট অইছিল পরে ১৪/১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী দুই দিনে মোর ধান কাইট্রা বাড়ি দিয়া যায়।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আমবৌলা গ্রামের জোনাব আলী বলেন, ধারা দেনা কইররা ও সমিতির লোন লইয়া মুই দেড়শ শতক জমিতে ধান চাষ করেছি। ফলন খুব ভালই অইছে তয় কৃষান সংকটে এ্যাহন ফসল ঘরে উঠাইতে পারমু কি না জানি না। একই কথা বললেন, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের খলিলুর রহমান, কালুপাড়া গ্রামের পশিম সন্যামত, মধ্য শিহিপাশা গ্রামের জালাল সরদার। গৌরনদীর কয়েকজন কৃষক জানান, আমন ধান পাকার সাথে সাথেই কেটে ঘরে তুলতে হয়। বিলম্ব হলেই ঝড় বৃষ্টি ফসলহানির সম্ভবনা থাকে। গৌরনদী উপজেলার চাদশী গ্রামের স্বপন সরদার বলেন, মুই সমিতির লোন কইররা ৮০ শতাংশ জমিতে বোরো চাষ করছি। ওই ধান বিক্রি করে দেনা দিমু এবং বাকি ফসল দিয়া পোলাপান লইয়া বাচার চেষ্টা করমু । কৃষান না থাকায় ফসল হারানোর সম্ভনা আছে। আকাশে মেঘ দেখলে পরানডার মধ্যে যেন কেমন করে। ধান ঘরে তুলতে পারবোতো।
আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন ও গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, ধান কাটা কৃষান সংকট রয়েছে। তবে এ সংকট কাটিয়ে কৃষকদের ফসল ঘরে তোলার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। ধান কাটা মৌসুমে এ অঞ্চলে ধান কাটতে গোপলগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, শরনখোলা, মোড়লগঞ্জ জেলা-উপজেলা থেকে কৃষানরা না আসায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ধান কাটা শ্রমিকদের আনার জন্য যোগাযোগ চলছে। ধান কাটা শ্রমিকরা স্ব স্ব এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে যাতে এখানে আসতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শ্রমিকদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই আনা হবে।