গৌরনদী
দাবীকৃত যৌতুক না দেয়ায় ॥ স্বামীর নির্যাতনে অন্তঃসত্বা স্ত্রীর গর্ভপাত, বিনাচিকিৎসায় ৭দিন ঘরের মধ্যে আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডচকম ঃ স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির দাবিকৃত যৌতুকের টাকা পরিশোধ না করায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের বোরাদী গরঙ্গল গ্রামে এক অন্তঃসত্বা গৃহবধূর উপর নির্মম নির্যাতন চালায় স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। নির্যাতনে গর্ভপাত ও অসুস্থ্য গৃহবধূর রক্তক্ষরন হলেও চিকিৎসা না দিেিয় ঘরের মধ্যে ৭দিন আটকে রাখেন। স্থানীয়রা মূমূর্ষ গৃহবধূকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে গতকাল বুধবার বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেছেন। এ ঘটনায় স্বামী ও শ্বশুরকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গৃহবধূর অভিযোগ, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের মুলাদী উপজেলার রামারপোল গ্রামের মৃত সেকেন্দার হাওলাদারের কন্যা সেলিনা বেগম(২৫)র গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের বোরাদী গরঙ্গল গ্রামের মো. দুলাল খানের পুত্র আনোয়ার খান(৩০)র সঙ্গে দেড় বছর পূর্বে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বামী আনোয়ার খানকে বিভিন্ন আসবাবপত্র ও স্বর্নালংকারসহ প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল দিয়ে দেন।
নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, বিয়ের ৮মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে স্বামী আনোয়ার খান বিদেশ যাওয়ার জন্য বাবার বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করলে সে বাবার বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা এনে দেন। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পরে গত নভেম্বর মাসে তার শ্বশুর দুলাল খান নতুন করে ৫০ হাজার টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। টাকা আনতে অস্বীকার করলে শ্বশুর দুলাল খান তাকে (গৃহবধূকে) বেদম মারধর করে। বিষয়টি ফোনে স্বামী আনোয়ার খানকে জানিয়ে বাড়িতে আসতে বললে স্বামী গত জানুয়ারি (২০১৬) মাসে বাড়িতে ফিরে আসেন।
গৃহবধূ সেলিনা অভিযোগ করে বলেন, আমি বর্তমানে ৪ মাসের অন্তঃসত্বা । কিছুদিন আগে আমার স্বামী তার বাবার কু-পরামর্শে আমাকে বলেন, তুই যদি বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে না দিস তাহলে তোর গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দিবো। আমি বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করলে স্বামী ও শ্বশুর মিলে আমাকে বিভিন্ন সময় লাঠিপেটা করে ।
নির্যাতিত গৃহবধূ সেলিনার বড় বোন লিলি বেগম (৩০) জানান, বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা আনতে অস্বীকার করায় গত ১৭ মে স্বামী আনোয়ার খান ও শ্বশুর দুলাল খান সেলিনাকে বেদম মারধর করে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে তাকে মাটিতে ফেলে তলপেটে আঘাত করে এবং পা দিয়ে পাড়াইয়া গর্ভপাত ঘটায়। এতে সেলিনার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিনা চিকিৎসায় ৭দিন ঘরের মধ্যে আটকে রাখেন। নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সহিদ খান জানান, তিনি গোপন সংবাদের ভিত্তিতি বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়দের নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে সেলিনাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর মহিউদ্দিন বলেন, প্রচ- রক্ত ক্ষরন অব্যাহত রয়েছে এ ছাড়া আঘাতজনিত কারনে রোগীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। যে কারনে গতকাল (বুধবার) বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে স্বামী আনোয়ার খান ও শ্বশুর দুলাল খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন জানান, গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পরে তারা উভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনোয়ারের এক নিকট আত্মীয় বলেন, নির্যাতনে গর্ভপাত ঘটেছে এ কথা সত্য নয়। এ ঘটনায় সেলিনা বাদি হয়ে স্বামী আনোয়ার খান ও শ্বশুর দুলাল খানকে আসামি করে গত মঙ্গলবার রাতে গৌরনদী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন মিলন বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।