গৌরনদী
চার বছরে নাম সংশোধন হয়নি, পেনশন বন্ধ হওয়ায় বৃদ্ধার মানবেতর জীবন যাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ চার বছরেও জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম সংশোধন হয়নি। নাম ভুলে জটিলতায় পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থ সংকটে খাদ্য সংকট ও বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবন যাপন করে ধুকে ধুকে মরছে অশীতিপর এক বৃদ্ধ (৮১)। বৃদ্ধার অভিযোগ গৌরনদী নির্বাচন অফিসের কমকর্তা ও কর্মচারীদের গাফলতি ও হয়রানীর কারনে তিনি চার বছর ধরে পেনশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বৃদ্ধার অভিযোগ, কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার লাখেরাজ কসবা গ্রামের আফসার হোসাইন গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারী (এমএলএসএস) ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী আলেয়া বেগম পেনশন ভাতা ভোগ করা শুরু করে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোগ করেন। পরবর্তিতে নামের ভুলে জটিলতার কারনে পেনশন বন্ধ হয়ে যায়।
আলেয়া বেগম জানান, ২০১৫ সালে পেনশন তুলতে গৌরনদী উপজেলা হিসাব রক্ষন কার্যালয়ে গেলে নামের বিভ্রাট ধরা পরে। তৎকালীন সময়ে উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা অতি দ্রæততম সময়ের মধ্যে তাকে নাম সংশোধন করার জন্য পরামর্শ দেন। নাম সংশোধন না করা হলে যে কোন সময় পেনশন প্রদান বন্ধ করা হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। ২০১৫ সালে জুলাই মাসে গৌরনদী নির্বাচন অফিসে গিয়ে নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করে নাম সংশোধনের বিধি অনুযায়ি প্রয়োজনীয় চালান ও কাগজপত্র জমা দেন। কাগজপত্র জমা নেওয়ার পরে কর্মকর্তারা বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করেন। কাগজপত্র জমা দেওয়ার দেড় বছরের বেশী সময় পরে নির্বাচন অফিস থেকে জানান কাগজপত্র ভুল হয়েছে তাই নাম সংশোধন করা হয়নি। তখন নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ি নতুন করে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিষ্টেড আদালতের মাধ্যমে নাম সংশোধনের (১৮/১২/১৬) এফিডএভিট, পৌর কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র, মেয়রের নাগরিক সনদ, পত্রিকার প্রকাশিত বিজ্ঞাপন ও ট্রেজারি চালান জমা দেন। কিন্তু অদ্যবধি তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নামের ভুল সংশোধন হয়নি। পেনশন বইতে দেখা গেছে, আলেয়া বেগম স্বামী মৃত এস, এম, আফসার হোসাইন নামে ৪৩ বছর পেনশন ভোগ করার পরেও দুই বছর ২ মাস পেনশন থেকে বঞ্চিত। পেনশন বইতে আলেয়া বেগম স্বামী এস, এম আফসার হোসাইন লেখা থাকলেও জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল বসত আয়েশা সিদ্দিকা স্বামী মৃত এস, এম, আফসার হোসাইন (এনআইডি-২৬৯৪৮১২০৮৪২৪০) লেখা হয়েছে।
বৃদ্ধা আলেয়া বেগম (৮১) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চাইর (চার বছর) বছর ধইররা মুই অফিসে যাইয়া বহু অনুনয় বিনয় করেছি কিন্তু স্যারেরা মোরে খালি ঘুরায়। হ্যারা শুধু আশা দেহায়, কোন কাম করে না। টাহার অভাবে খাইতে পারি না, চিকিৎসা করতে পারি না। জীবনের শেষ সময়ে এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। নাম ঠিক কইররা মুই মনে হয় আর পেনশন ভোগ করতে পারমু না। সরকারি গৌরনদী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোসলেম উদ্দিন সিকদার বলেন, অসহায় বৃদ্ধার অসহায়ত্ব দেখে আমি নিজে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করি। গত ২/৩ বছর ধরে নামের সংশোধন করার জন্য অসংখ্যবার ঢাকা ও গৌরনদী কার্যালয়ে ধর্না দিয়ে চেষ্টা তৎবির করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। গৌরনদী অফিস গেলে তারা বলে ঢাকায় যোগাযোগ করুন, আর ঢাকা অফিসে গেলে বলে গৌরনদী অফিসে যোগাযোগ করুন। ২/৩ বছর ঘোরাঘুরি করে এখন আশা ছেড়ে দিয়েছি। গৌরনদী পৌর সভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী তৌফিক ইকবাল ওরফে সজল বলেন, চার বছরে নাম সংশোধন না হওয়ায় পেনশন বন্ধ হয়ে বৃদ্ধা মানবেতর জীবন যাপন করেছে। আমি একাধিকবার পত্যয়নপত্র দিয়েছি তার পরেও কেন নাম সংশোধন হচ্ছে না তা বোধগন্য নয়। ৮০ বছরের বৃদ্ধা জীবনের শেষ সময় অর্ধাহারে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় দিন যাপন করছে। যাতে নাম সংশোধন হয়ে পেনশন ভোগ করতে পারে সেজন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, নাম সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে বেশ কিছু দিন আগেই ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠনো হয়েছে। সেখান থেকে কেন সংশোধন করে দিচ্ছে না তা আমি বলতে পারবো না। আমাদের স্থানীয় অফিসের যা যা করার সবই করেছি এখন আমাদের কিছুই করার নাই।