গৌরনদী
এবার আগৈলঝাড়ায় ৮৭ বিএনপি নেতাকর্মির বিরুদ্ধে দুটি মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৮৭ জন নেতাকর্মির নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা অসংখ্য নেতাকর্মিকে আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. সাইদুল সরদার ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ লিটন বাদি হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, আসামিরা আ.লীগ নেতাকর্মিদের ওপর বোমা হামলা চালিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মিকে আহত ও সড়কের ইট তুলে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়।
আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. সাইদুল সরদারের দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি কার্তিক বেপারী, রতœপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান আকন, আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি শামছুল হক খোকন, সাধারন সম্পাদক মো. হেমায়েত তালুকদার, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি তারেক ফকির, বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. বক্তিয়ার, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আলী হোসেন ওরফে স্বপন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. ফিরোজ মোল্লা, রতœপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক আনোয়ার শাহ, আগৈলঝাড়া ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভিপি ও ছাত্রদলে সহ-সভাপতি মো. সেলিম সরদার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রিপন বেপারী, রতœপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রিপন মৃধাসহ ৫৫ জনের নামাল্লোখ করে অজ্ঞাতনামাসহ অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মি ।
অপরদিকে আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ লিটনের দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা জাসাসের সাবেক সভাপতি মো. মনির মোল্লা, রাজিহার ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ আলী, রাজিহার ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি তোফাজ্জেল মোল্লা, আগৈলঝাড়া উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আলাল মৃধা, রাজিহার ইউনিয়ননের ১নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য ডবিøউ তালুকদার, উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মিনহাজ ফকির, বাগধা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি জামাল বক্তিয়ার, রতœপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগাম সাধারন সম্পাদক ফিরোজ শাহসহ ৩২ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মি।
যুবলীগ নেতা মো. সাইদুল সরদারের এজাহারে উল্লেখ করেন, আগৈলঝাস্থ দলীয় কার্যালয়ে সভা শেষ করে মটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে আগৈলঝাড়াÑবাশাইল সড়কের আতাউর ফকিরের বাড়ির সামনে পাকা সড়কে পৌছলে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মিরা রাস্তায় গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ সময় আমাদের টের পেলে লাঠিসোটা ও রড নিয়ে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে ২/৩টি হাত বামা নিক্ষেপ করে। যাতে অনেক নেতাকর্মি আহত হন।
আবদুল্লাহ লিটন এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন আগৈলঝাড়া বাজার থেকে সুজনকাঠী যাওয়ার পথে সুজনকাঠী মজিদ বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইটের সলিং রাস্তার ওপর পৌছলে দেখি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করতে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মিরা জমায়েত হয়েছে। হাতের লাইটের আলোতে দেখি বিএনপি, জামাতের পরিচিত নেতাকর্মিসহ আসামিরা রামদাসহ ধারাল অস্ত্র, লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যেতে বাধ্য করে। এ সময় তারা রাস্তার প্রায় ৬/৭শত ইট উপরে ফেলে এবং বিদ্যুৎ ষ্টেশনসহ সরকারি স্থপনা উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের কোথাও কোন ইট উপরে ফেলা হয়নি। এ সময় স্থানীয়রা জানান, তাদের এলাকায় বোমা হামলা সংঘর্ষসহ এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। উপজেলার সুজনকাঠী গ্রামের এক তরুন (২২) বলেন, আমাদের এলাকায় বোমা হামলায় হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। বর্তমান পরিস্তিতিতে বিএনপি নেতাকমির্রা রাতে সভা করে আ.লীগ নেতাকর্মিদের ওপর হামলা করেছে, এটা হাস্যকর বিষয় ছাড়া কিছ্ইু না। আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মিনহাজ ফকির অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মি ও সন্ত্রাসীরা অনেক আগেই আমাদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে হামলা করায় ভয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছি। পুলিশ অনেক আগেই মামলা ছাড়া অহেতুক হয়রানী করে এলাকা ছাড়া করেছে। রতœপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান আকন বলেন, নির্বাচনে যাতে আমিসহ বিএনপি নেতাকর্মিরা বাড়ি আসতে না পারি সেই কারনে এই গায়েবী মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি শামছুল হক খোকন বলেন, পুলিশ ঘটনাবিহীন ঘটনায় মামলা রুজু করে গোপন রাখে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর আমাদের ধরতে অভিযানে মাঠে নামলে গায়েবী মামলার বিষয়টি জানতে পারি। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও কার্যনির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মিদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় তফসিল ঘোষনার পরই গায়েবী মামলার আসামিদের ধরতে বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস,এম, আফজাল হোসেন বিএনপি নেতাকর্মির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন ঘটনা ঘটেনি এ কথা সত্য নয়। ঘটনা ঘটেছে, বিধায়ই সুনিদৃষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলার সুজনকাঠীর ঘটনায় যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ লিটন ও বাশাইলের ঘটনায় মো. সাইদুল সরদার বাদি হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেছে। ঘটনাস্থল থেকে লাল কসটেপ মোড়ানো ৪টি অবিস্ফোরিত বোমা, লাঠিসোটা ও রড উদ্ধার করেছে পুলিশ।