গৌরনদী
গৌরনদীতে সরকারি হাসপাতালের ওষুধ পাচারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় সাধারন ডায়েরী
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদীতে ডাক্তার ও কর্মচারীদের যোগসাজসে সরকারি হাসপাতালের বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ পাচার করাসহ অবৈধ ভাবে পোড়ানো হয়েছে। পাচার হওয়া বস্তাভর্তি ঔষধ ও পোড়ানো ঔষধের ভিডিও ধারন ও ছবি তুলতে গিয়ে ডাক্তার-কর্মচারীদের যোগসাজসে স্থানীয় ১০জন সাংবাদিক প্রায় দুই ঘন্টা অবরুব্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে ইউনওর নেতৃত্বে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রোববার রাতে উপজেলা প্রাণী সম্পদের ভেটেরিনারি সার্জনকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সায়িৎদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ বাদি হয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় স্টোর কিপার সাইদুল ইসলামকে দায়ি করে সাধারন ডায়েরি করেছেন। তদন্ত কমিটিকে আগামি তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ^াস। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটিকে ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত চিকিৎসকগন নিজেদেরকে বাঁচাতে ষ্টোর কিপার ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের ওপর ঘটনার দ্বায় চাপাচ্ছেন।
জানাগেছে, গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ পাচার হওয়া ও পোড়ানোর খবর আসে। এ খবরে দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন ও মাইটিভি’র প্রতিনিধি মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়াসহ স্থানীয় দশজন সংবাদকর্মীরা দ্রæত সেখানে ছুটে যান। তখন তারা দেখতে পান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার ও ষ্টোর কিপার সাইদুর রহমান, ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী আনোয়ার হোসেন, খোকন ও দুলালসহ তাদের বহিরাগত আরো ৪/৫ জন সহযোগী মিলে কয়েকটি বস্তা ভর্তি সরকারি ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার কোয়াটারের পাশে একটি নির্জন স্থানে ফেলে বেশ কিছু ঔষধ পোড়ানো হচ্ছে। সংবাদকর্মীরা এর ভিডিও ধারন ও ছবি তুলতে গেলে তখন ডাক্তার-কর্মচারীরা বেশ কিছু সরকারি ঔষধ সেখানে ফেলে পালিয়ে যায়। সংবাদ সংগ্রহ শেষে সংবাদকর্মীরা ওই এলাকা ত্যাগ করতে গিয়ে দেখেন ডাক্তার কোয়াটারের দুটি গেট তালাবদ্ধ করে দিয়ে সিকুরিটি লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে আটকে ফেলা হয়েছে বুঝতে পেরে সাংবাদিকরা তাৎক্ষনিক তারা ঘটনাটি গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসকে জানান ও ফেইসবুক লাইভে এসে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ এ সময় তার কোয়াটারের বাসায়ই ছিলেন। সাংবাদিকরা মুক্ত হতে তার মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দেন। তিনি সংবাদকর্মীদের ফোন রিসিভ করেননি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), মডেল থানার এসআই কামাল হোসেনকে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার কোয়াটারের গেট খোলার নির্দেশ দেন। তাকে দীর্ঘ সময় সেখানে অপেক্ষা করিয়ে রেখে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ গেটের তালা খুলে দেন। ফলে ঘটনার প্রায় দুইঘন্টা পর আটকে রাখা সংবাদকর্মীরা মুক্ত হন।
এরপর ইউএনও’র নির্দেশে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার কোয়ার্টার ও আসপাশের এলাকা তল্লাশী চালিয়ে কোয়াটারের পাশের ঝোপ ও ঝাড়ের ভেতর থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে নেয়া বস্তাও কার্টন ভর্তি বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ ও ইনজেকশন এবং চিকিৎসা সামগ্রী জব্দ করেন। যেগুলোর গায়ে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ লেখা রয়েছে।
ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার শতাধীক সাধারন মানুষ ও সংবাদকর্মীরা ওই রাতে সেখানে জড়ো হয়ে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে প্রত্যহারপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবিতে ইউএনও’র সামনে মিছিলসহকারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে রাত ১টার দিকে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে উত্তেজিত এলাকাবাসীকে শান্ত হয়ে ঘরে ফেরেন।
একটি গোপন সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটিকে ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত চিকিৎসকগন নিজেদেরকে বাঁচাতে ষ্টোর কিপার ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের ওপর ঘটনার দ্বায় চাপাচ্ছেন।
আটকের শিকার সাংবাদিক মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া, কাজী আল আমীন দাবি করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার নির্দেশে ডাক্তার কোয়াটারের দুটি গেটে তালা দিয়ে আমাদেরকে আটকে রাখা হয়।
সাংবাদিকদের আটকে রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ষ্টোর কিপার ডেট ওভার কিছু ঔষধ পুড়িয়ে ফেলেছে। পাচার করা বস্তাভর্তি ডেট থাকা সরকারি ঔষধ উদ্ধার এবং সাংবাদিকদের আটকে রাখার ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুরো ঘটনার দায়ভার ষ্টোর কিপার সাইদুল ইসলামের উপর চাঁপিয়ে দিয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার নিজেকে নির্দোষ সাজানোর চেষ্টা করেন। সাংবাদিকদের ধারন করা ভিডিও ফুটেজে ঔষধ পাচার ও পোড়ানোর ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সংবাদকর্মীদেরকে আটকে রাখার খবর পেয়ে পুলিশসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু সরকারি ঔষধ জব্দ করা হয়েছে। যার অধিকাংশরই ডেট আছে। প্রাথমিক তদন্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, শনিবার দিবাগত রাত ৮টা ২৩ মিনিটের দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ট্রলি ভর্তি করে ঔষধের কার্টনগুলো বাহিরে নেয়া হয়েছে। পুরো ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করাসহ এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচারে জন্য রোববার রাতে উপজেলা প্রাণী সম্পদের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মাছুম বিল্লাহকে আহবায়ক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আঃ জলিল, গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) তৌহিদুজ্জামানকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।