গৌরনদী
লকডাউনে কেমন চলছে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ সারা দেশের ন্যায় বরিশালের প্রবেশ দ্বার গৌরনদী উপজেলা ও পাশ্ববর্তি আগৈলঝাড়া উপজেলার চলছে লকডাউন। দুই উপজেলার প্রতিটি বিপনীকেন্দ্র, হাটবাজার বন্ধ রয়েছে। করোনার ঝুঁকি এড়াতে সাধারন মানুষ সরকারের এ ঘোষনায় ব্যপক সারা দিয়েছে। করোনা মহামারি এড়াতে টানা বন্ধ কর্মসূচী গৌরনদী ও পাশ্ববর্তি আগৈলঝাড়া উপজেলা। প্রয়োজন ছাড়া ঘোরাফেরা করলেই গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসন।
দেশে করোনায় আক্রান্ত সনাক্ত হলে এবং পাশ্ববর্তি জেলা মাদারীপুরে ভয়াহতা ছড়িয়ে পরার পরে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দুটি উপজেলা মাদারীপুরের সীমান্তবর্তি হওয়ায় করোনার ঝুঁকি এড়াতে কঠোর থেকে কঠোরতর হন প্রশাসন। সরকারি লকডাউনের ঘোষনার দুই আগে মঙ্গলবার থেকে সকল হাট-বাজার দোকানপাট বিপনীকেন্দ্র বন্ধ ঘোষনা করেন। প্রয়োজন ছাড়া হাট-বাজারগুলোয় মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রশাসন। এরপর থেকে মানুষের আনাগোনা ক্রমশ কমতে থাকে।
উপজেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় ইটালী, ফ্রান্স, জার্মান, স্পেন,সিংগাপুর ও ভারত থেকে ৪৩৫ জন ও আগৈলঝাড়ায় ৫২০ জন প্রবাসী এসেছেন। তাদের মধ্যে গৌরনদীতে ৮৪ জন ও আগৈলঝাড়ায় ৯৫ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। কোয়ারেন্টাইন ভঙ্গ করার ইতোমধ্যে গৌরনদী- আগৈলঝাড়ায় ১২ জনকে জড়িমানা করা হয়েছে। গৌরনদীর বড় কসবা মহল্লার একটি পরিবারের ৬ জনকে কোয়ারেন্টিনে থাকাসহ বাড়িতে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। গৌরনদী উপজেলার টরকী, কসবা-গোহাট, বাটাজোর মাহিলাড়াসহ ২০টি হাট বাজার ও আগৈলঝাড়ায় গৈলা, পয়সারহাটসহ ১২টি হাটবাজারের দোকানপাট বন্ধ রাখা হযেছে। এসব এলাকার হাট-বাজারে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের হাতে গোনা কিছু দোকান ওষুধের দোকান ও খাবারের কিছু দোকান খোলা রয়েছে।
গৌরনদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান বলেন, করোনা আক্রান্ত মাদারীপুরের পাশ্ববর্তি গৌরনদী হওয়ার আমাদের বেশী সতর্ক থাকতে হচ্ছে। তাছাড়া গৌরনদী হচ্ছে বরিশালে প্রবেশ দ্বার সে কারনেও কঠোর অবস্থান গ্রহন করতে হচ্ছে। আমরা মাদারীপুরের অভ্যন্তরীন সকল সড়ক ও নৌপথ বন্ধ করে দিয়েছি। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, করেনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে উপজেলার সর্বত্র ১০টি বিধি নিষেধ জাড়ি করা হয়েছে। এগুলো অমান্যকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির সিদ্বান্ত গ্রহন করেছি। অপ্রয়োজন রাস্তায় ঘোরা ফেরা করলে তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া
আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর জেলার সীমান্তবর্তী গৌরনদীর বাকাই, টরকী, টরকী খেয়াঘাট, কয়ারিয়াসহ ১২ টি সড়ক ও নৌ-পথে পুলিশের চেক পোষ্ট রয়েছে। কোথাও কোথায় সড়কগুলোতে বাঁশ বেধে কিংবা বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। হাট-বাজারগুলোয় দোকানপাট প্রায় সবই বন্ধ। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মহাসড়কে বরিশাল মাদারীপুর বাসচলাচল ও দুর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে মহাসড়কে কিছু ট্রাকে চলাচল করতে দেখা গেছে। সামান্য কয়েকজন ভ্যান চালক ও রিকসা চালক জীবিকার জন্র রাস্তায নেমেছে কিন্তু লোকজন বের না হওয়ায় তাদের বসে থাকতে দেখা দেখা গেছে। গৌরনদী অটোটেম্পু ও মাহেন্দ্রা চালক সমিতির সাধারন সম্পাদক ফারুক বেপারী বলেন, গৌরনদী- আগৈলঝাড়ার বিভিণ্ন সড়কে দেড় হাজার অটোরিকসা, মাহেন্দ্রা চলাচল করত বর্তমানে সব বন্ধ রয়েছে। আয় রোজগার বন্ধ হওয়ায় পরিবারের ভরনপোষন নিয়ে শঙ্কিত। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টায় পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্টান্ড অবস্থান নিযে দেখা গেছে। মহাসড়কে গনপরিবহন নেই। মালবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত কিছু কিছু গাড়ি চলছে। গৌরনদী ও আগৈরঝাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি উপজেলায় ডে লেবার (যাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে) ৩শত করে ৬শত পরিবারকে ১০কেচি চাল, ৫ কেজি আলু ও ১ কেজি ডাল প্রদান করা হয়েছে। এ কর্মসূচী অব্যহত থাকবে। গৌরনদীর সদরের গৌরনদী সুপার মার্কেট, জননী মার্কেট, তফেলউদ্দিন মার্কেট মিশন মার্কেট, গৌরনদী বন্দর মার্কেট, ভাই ভাই সপিং প্লাজা, টরকী বন্দরসহ সব মার্কেট ও বাজারে গিয়ে দোকান পাট বন্ধ দেখা যায়।
গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘আমাদের ১২টি চেক পয়েন্ট (তল্লাশির স্থান) রয়েছে। এলাকা ঝুকিমুক্ত রাখতে ৮০ জনের বেশী পুলিশ সদস্য দিনরাত কাজ করছে। আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, চেকপোষ্ট, হোম কোয়ারেন্টিনে বাধ্য করা, প্রবাসীদের খুজে বের করা, অযাথা ঘোরাফেরারোধসহ আগৈলঝাড়া এলাকা ঝুকিমুক্ত রাখতে দিনরাত কাজ করছে ৬০ জন পুলিশ।