গৌরনদী
করোনামুক্ত হতে রাতভর থানতুনি পাতা খাওয়ার গুজব
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলায় মঙ্গলবার গভীর রাতে গুজব ছড়িয়ে পরে তিনিটি থানতুনী পাতা খেলে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে ফজরের নামাজের পূর্বেই এ পাতা খেতে হবে। এ খবর গুজব খবর ছড়িয়ে পরার সঙ্গে সঙ্গে রাত ২টা থেকে ফজর নামাজের আগ পর্যন্ত পাতা খাওয়ার হিড়িক চলে।কোথাও কোথায় মাইক থেকে ঘোষনা করা হয়।
থানতুনী পাতা খেয়েছেন এ ধরনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের স্বজনরা রাত তিনটায় হঠাৎ ফোন দিয়ে জানান, থানতুনী পাতা খেলে করোনা থেকে মুক্তি মিলবে। এ খবর পাওয়ার পরে তারা রাতেই পাতা খোজার সন্ধানে নামেন এবং বাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশের জঙ্গল থেকে পাতা তুলে খেয়ে নেন। গৌরনদী পৌর সভার দক্ষিন বিজয়পুর গ্রামের ইব্রাহিম সরদারের স্ত্রী জড়িনা বেগম (৫৫) বলেন, তাকে রাতে ফোন দিয়ে এক আত্মীয় পাতা খাওয়ার বিষয়টি জানান সঙ্গে সঙ্গে আমি রাত তিনটায় পাতা তুলে খেয়ে নেই এবং ফোন দিয়ে সকল আত্মীয়কে থানতুনী পাতা খেতে বলি। উজিরপুর উপজেলার সখিনা বেগম (৬০), হাবিব সরদার (৪৮) বলেন, মোর অনেক আত্মীয় রাইতে ফোন দিয়ে মোরে কয় ৩টি থানতুনী পাতা রাতের মধ্যে খাইলে হ্যাগো আর করোনা অইবো না। খবর পাইয়া মুই সঙ্গে সঙ্গে বাগান থেকে পাতা আইন্না খাই । পরে হগোলডিরে ফোন দিয়া খাইতে কই। গৌরনদী পৌর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মোঃ নিলু আহম্মেদ (৬২) বলেন, আমরা আত্মীয় স্বজনের ফোন পেয়ে পাতা খেয়েছি। এতে উপকার না হোক ক্ষতি নাই এবং সকলকে খেতে বলছি। গৌরনদী তফেল উদ্দিন মার্কেকের ব্যবসায়ী মোঃ হায়দার আলী (৫৪) বলেন, রাইতে মায় কার কাছে হোনছে ৩টি থানতুনী পাতা খাইলে কেরোনা অইবে না। মায় তিনডা পাতা আইন্না খাইয়ে দিছে মুইসহ ঘরের হগোলডি খাইছি।
আগৈলঝাড়া উপজেলার ছয়গ্রাম গ্রামের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হাজী দম্পতি জানান, ফোন পেয়ে রাত তিনটাই পাতা তুলে খেয়েছি এবং পরিবারের ৬ জন সদস্যকে খাইয়েছি । কে এই আদেশ দিয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, শুনেছি এক পীর স্বপ্নে পেয়েছে এবং সে পাতা খেতে নির্দেশ দিয়েছে । পীরের নাম জানতে চাইলে তারা জানান, তাতো জিজ্ঞাসা করিনি। গৌরনদী পৌর সভঅর এক নারী জানান, তিনি এ খবর পেয়ে পাতা না খেয়ে তাহাজ্জুত নামাজ পরেছেন। তবে তার বাড়ির আশ পাশে রাত তিনটা থেকে ফজরের নামাজের আজান পর্যন্ত পাতা খাওয়ার হিড়িক পড়েছিল।থানতুনী পাতা খেতে কে বলেছে জানতে চাইলে কেউই সুনিদৃষ্ট কিছু বলতে পারেনি। সকলেই জানান, এক পীর স্বপ্নে পাইছে এবং সে মুরীদদের নির্দেশ দিছে।
বুধবার সকালে এ নিয়ে সোমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্য করে পোষ্ট দেন। খালেদ মহসীন নামে একজন লিখেছেন তার এলাকায় একটি মসজিদ থেকে মাইকে এ ধরনের প্রচারনা চালানো হলে পাতা খাওয়ার হিড়িক পরে যায়। ৫ জনে স্ব স্ব আইডি থেকে পোষ্ট বিষয়টি গুজব বলে পোষ্ট সকলকে গুজবে কান না দিতে আহবান জানিয়েছেন। অনেকেই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। পাতা খেয়েছেন এ ধরনের শতাধিক ভূক্তভোগী জানান, গভীর রাতে থানতুনী পাতা খেলে করোনা হবে না খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পাতা খেয়েছেন। সারা রাত পাতা খাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পরলে প্রতিটি এলাকায় হাজার হাজার মানুষ রাত জেগে পাতা সন্ধান করে এবং তা সংগ্রহ করে খান।
থানতুনী পাতা খেলে করোনা মুক্ত ও করোনা প্রতিরোধ হবে ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই। এটি একটি গুজব। উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী, আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বখতিয়ার আল মামুন ও গৌরনদী মেডিকেল অফিসার ডাঃ অমূল্য রতন বাড়ৈ বলেন, থানতুনী পাতায় অনেক গুনাগুন রয়েছে। থানতুনী পাতা খেলে কোন কোন রোগ নিরাময় হয় কিন্তু থানতুনী পাতা খেলে করোনা প্রতিরোধ কিংবা মুক্ত হবে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে এর কোন অস্তিত্ব নেই। এটা গুজব।মঙ্গলবার রাতে গুজব শুনে থানতুনী পাতা খাওয়ার হিড়িক পরেছিল। গুজব থেকে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য তারা সকলের প্রতি আহবান জানান।