গৌরনদী
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিবিজরিত শত বছরের বটগাছ না কাঁটার দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের কটকস্থল (সাউদেরখালপাড়) এলাকায় ৭১র মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিবিজরিত শত বছরেরর ঐতিহ্যবাহী বটগাছটি না কাটার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। ঠিকাদারের লোকজনকে গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়ে তারা এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন
গৌরনদী উপজেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী ঢাকা-বরিশাল মহাসড় দিয়ে দক্ষিনাঞ্চলের প্রবেশের জন্য ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে মাদারীপুর ক্রস করে গৌরনদী ভূরঘাটা বাসষ্টাÐ পৌছে এ জনপদে অগ্নিসংযোগ করে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেন । এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে পাক হাাদার প্রতিরোধের সিদ্বান্ত নেন। সিদ্বান্ত অনুযায়ি মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার প্রতিরোধে সুবেদার গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল (সাউদেরখালপাড়) নামকস্থানে বট গাছের পিছনের অংশে বাংকার তৈরী করে অবস্থান নেন।
সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া গৌরনদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারী কমাÐার আব্দুর রাজ্জাক চোকদার জানান, ওইদিন (২৫ এপ্রিল) পাক হানাদারের গাড়ি কটকস্থল পৌছলে তাদের সঙ্গে হানাদারের সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। পাক সেনাদের সাথে বরিশালে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন গৌরনদীর নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ আবুল হাসেম, চাঁদশীর পরিমল মন্ডল, বাটাজোরের মোক্তার হোসেন ও গৈলার সিপাহী আলাউদ্দিন ওরফে আলা বকস । ওইদিন মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ৮ পাক সেনা নিহত হন। সেই থেকে দিনটি গৌরনদী পাক হানাদার প্রতিরোধ দিবস হিসেব পালন হয়ে আসছে। এটাই ছিলো বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে স্থলপথে হানাদারদের সাথে প্রথম যুদ্ধ। প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল বটতলায় মুক্তিযোদ্ধারা সমাবেশের অয়োজন করে শহীদ সহযোদ্ধাদের স্মরনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার ১০/১৫ শ্রমিক শত বছরের বট গাছটি কাঁটা শুরু করেন। এ সময় এলাকার লোকজন গাছ কাটতে বাধা দেন। গাছ কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছেন মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান ওরফে ঈদুল মাঝি, সেলিম মাঝিসহ অনেকেই। তারা গাছ কাটতে বাধা দিলে শ্রমিকদের সঙ্গে বাকবিতাÐা হয়। এক পর্যায়ে তারা গাছ কাটা বন্ধ করে দেন এবং না কাটার আবেদন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত এই স্থানটি সংরক্ষন করে সরকারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থম্ভ নির্মানের দাবি করে আসছি। সরকার বা প্রশাসন সে দাবি পুরন করে বরং স্থানটি নিশ্চিহ্ন করতে ৭১র মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিবিজরিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বটগাছটি কেটে ফেলতে চাইছে । গাছটি না কাটার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান । শ্রমিকরা জানান, ঠিকাদার গাছটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ক্রয় করেছেন এবং ঠিকাদারের নির্দেশে তারা গাছ কাটা শুরু করেন।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের প্রতিনিধি আলী আশরাফ বলেন, আমারা অন্যান্য গাছের সাথে সড়ক ও জনপথ দপ্তর থেকে দরপত্রের মাধ্যমে এ বটগাছটিও কিনে নিয়েছি। কার্যাদেশ অনুযায়ী গাছটি আমাদের। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা কমাÐার খালেদা নাসরিন বলেন, ওই স্থানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। গাছটি কাটা সম্পর্কে আমি অবহিত নই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।