গৌরনদী
মোর বাবায় বিজয়ের লাল সুর্য্য দেইখ্যা মরতে পারলো না, বিজয় দেখতে পারলে আত্মা শান্তিতে থাকত
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাবায় বিজয়ের লাল সুর্য্য দেইখ্যা মরতে পারল না, যদি জানতে পারতো তাগো সংগ্রাম জিতছে হ্যালে আনন্দ পাইত, বাবার আত্মা শান্তি পাইত। আইজগো মোর বাড়িতে কত বাবায় আইছে, হ্যাগো লগে মোর বাবায় নাই। কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র অন্দোলনে ৪ আাগষ্ট মোহাম্মদপুর চৌরাস্তায় মাথায় গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ শুক্রবার সকালে ৮টায় মারা যাওয়া ইলিয়াস খানের মা রেখা বেগম (৫৫)। নিহত ইলিয়াস খান বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের পশ্চিম শাওড়া গ্রামের মোঃ ফারুক খানের পুত্র ।
শুক্রবার দুপুরে নিহত ইলিয়াস খানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে লাশের অপেক্ষায় শত শত নারী পুরুষ শিশু ও আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য মানুষের ভীড়। সকলের কান্না ও শোকের মানতে আকাশ বাতাশ ভাড়ী হয়ে উঠছে। নিহত ইলিয়াসের মাকে শান্তনা দিচ্ছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী। বাড়ির পাশেই তৈরী করা হয়েছে শহীদ ছাত্রনেতা ইলিয়াস খানের কবর। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও গ্রামবাসি জানান, গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের পশ্চিম শাওড়া গ্রামের মোঃ ফারুক খানের পুত্র ইলিয়াস খান লেখাপড়া শেষ করে চাকুরীতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সে গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিল। স্থানীয় ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ার অপরাধে গত ২৫ জুলাই চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চাঁদশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইলিয়াস খানকে তার (চেয়ারম্যানের) বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন করে এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেন। প্রান বাচাতে গত ২৮ জুলাই ইলিয়াস খান তার বন্ধু নয়ন ইসলামের কাছে ঢাকা মোহাম্মদপুর চলে যান এবং সেখানে গিয়ে আহত শরীর নিয়ে ঢাকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন।
নিহত ইলিয়াস খানের বড় ভাই মোঃ মহসীন খান কাঁদতে কাঁদে বলেন, আমার ভাই ঢাকায় গিয়েও আন্দোলনে যোগ দেয়। সর্বশেষ গত ৩ জুলাই ফোনে আমাকে জানায়, “ভাই আমি আন্দোলনে আছি যদি মারা যাই মা-বাবাকে দেখ রেখো। আর যদি বেঁচে থাকি তাহলে দেখা হবে। আমার শত শত ভাই প্রান দিচ্ছে আমি একা বেঁেচ থেকে কি হবে তুমি দোয়া কর আমরা যেন দেশ স্বাধীন করতে পারি”। তিনি আরো বলেন, গত ৪ আগষ্ট বিকেল ৫টার দিকে মোহাম্মদপুর চৌরাস্তায় আন্দোলনে গিয়ে ইলিয়াস মাথার ডান পাশ দিয়ে গুলি রেগে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে তার একটি চোখ বের হয়ে গেছে। আহত অবস্থায় সহযোদ্ধারা ইলিয়াসকে নিউরোসাইনস হাসপাতালে ভর্তি করে। ভর্তির পর থেকে ইলিয়াস অজ্ঞান অবস্থায় মৃত্রুর সাথে পাঞ্জা লড়ে। ৬দিন মৃত্রুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার সকাল ৮টায় হাসপাতালে মারা যান। কাঁদতে কাঁদতে বার বার মূর্ছা যান মা রেখা বেগম (৫৫)। তিনি বিলাপ করে বলেন, মোর বাবায় বিজয়ের লাল সুর্য্য দেইখ্যা মরতে পারল না, যদি জানতে পারতো তাগো সংগ্রাম জিতছে হ্যালে আনন্দ পাইত, বাবার আত্মা শান্তি পাইত। আইজগো মোর বাড়িতে কত বাবায় আইছে, হ্যাগো লগে মোর বাবায় নাই। হে আল্লাহ ক্যান এমন অইল। নিহত ইলিয়াস খানের বাবা মোঃ ফারুক খান (৫৮) বলেন, মোর পোলায় রাজনীতির সংগ্রাম করছে দেইখ্যা আমলীগের নেতারা মোর পোলাডাড়ে ধইররা নিয়া কি মারা মারছে। মোর বড় পোলার দোকান বন্ধ কইররা দিছে। দল করা অপরাধে ঋন নিয়া চেয়ারম্যানরে চান্দা দিতে অইছে। আইজ সব ঠিক অইয়া গ্যাছে মোর পোলাডা বাইচ্চা নাই। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র অন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মোঃ বাবুল হোসেন আশরাফুল ইসলাম আনাম বলেন, যেই দেশ প্রেম ও গনতন্ত্র পুনঃ উদ্ধারের চেতনায় নতুন প্রজন্মের ছাত্ররা প্রান দিল তাদের সেই স্বপ্নের দেশ গড়তে পারলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। আমাদের আন্দোলনের সার্থকতা হবে। আমরা দেশবাসির প্রতি শহীদদের কথা স্মরন রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহবান জানান।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ জুলাই মোহাম্মদপুর চৌরাস্তায় পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের পশ্চিম শাওড়া গ্রামের মোঃ ফারুক খানের পুত্র ইলিয়াস খান (২৬)। গত ৬দির ঢাকা নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় মারা যান। (ইন্নালিল্লাহে ……………রাজেউন)। আজ বাদ আছর পশ্চিম শাওড়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে নিহতের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।