গৌরনদী
প্রতারনার শিকার দুই যুবতি ॥ স্বামীকে খুঁজতে এসে উজিরপুরে নির্যাতিত, গৌরনদীতে যুবতিকে ফেলে স্বামীর পলায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ ঢাকার এক যুবতিকে প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করে ফেলে আসে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার এক প্রতারক। অন্তঃসত্বা স্ত্রী স্বামীকে খুঁজতে এসে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত গৃহবধূ রোজিনা আক্তার(২২) ও তার বাবা। অপরদিকে মাদারীপুরের এক যুবতিকে বিয়ে করে উজিরপুরের আরেক প্রতারক যুবক। যুবতিকে গৌরনদী বাসষ্টা-ে ফেলে পালিয়েছে প্রতারক স্বামী। বুধবার রাতে পুলিশ যুবতিকে উদ্ধার করে। প্রতারিত এক যুবতি ফোনে আরেক যুবতি ফেইসবুকে পরিচয় হয়।
মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কৈতরা গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল মৃধার কন্যা রোজিনা আক্তার(২২) জানান, মুঠোফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের কেশবকাঠী গ্রামের এনায়েত হোসেনের পুত্র মাইনুল বাদশা (২৮)র সঙ্গে। পরবর্তিতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ৮ মে আদালতের মাধ্যমে (কোর্ট ম্যারেজ) তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর দু’জনে ঢাকার ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। গত মাসে সে (রোজিনা) অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি স্বামী মাইনুল বাদশাকে অবহিত করার পরে ১৬ জুলাই স্বামী তাকে ফেলে পালিয়ে গ্রামে বাড়ি উজিরপুরে চলে আসে এবং মুঠোফোনসহ সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
প্রতারনার শিকার যুবতি রোজিনা বলেন, আমি বৃদ্ধ বাবা জয়নাল মৃধাকে নিয়ে স্বামীকে খুঁজতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার গ্রামের বাড়িতে যাই। গিয়ে জানতে পারি স্বামী মাইনুলের প্রথম স্ত্রী রয়েছে। আমার আসার খবর পেয়ে মাইনুল বাদশা আত্মগোপন করেছে। এসময় বাড়িতে অবস্থান নিয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে মাইনুলের পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে মাইনুলের বাবা এনায়েত হোসেন, মা নারগিস বেগম ও মাইনুলের প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম আমাকে ও বাবাকে রাতভর নির্যাতন করে। নির্যাতনের সময় স্বামী মাইনুল বাদশাকে আমি তালাক দিয়েছি এই মর্মে সাদা ষ্ট্যাম্পে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন। স্থানীয়রা বাবা ও মেয়েকে উদ্ধার করে বুধবার সকালে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, বিষয়টি জানার পরে হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার চিকিৎসার খোজ খবর নেওয়া হয় এবং নির্যাতিতারা কাছ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযোগ গ্রহন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে মাদারীপুর জেলার ডাসার থানার ধুলোক গ্রামের ওয়াজেদ হাওলাদারের কন্যা সনিয়া বেগম (২০)জানান, গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার সঙ্গে পরিচয় হয় বরিশালের উজিরপুর উপজেলার তেরআনা গ্রামের সোবাহান হাওলাদারের পুত্র রং মিস্ত্রি রুবেল হাওলাদার(২৬)র সঙ্গে। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে গত অক্টোবর(২০১৬) মাসে উভয়ে বিয়ে করে ঢাকা বাড্ডা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
সনিয়া বলেন, বিয়ের পরে আমি রুবেলে গ্রামের বাড়ি আসতে চাইলে রুবেল বিষয়টি এড়িয়ে যেত। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে একাধিকবার ঝগরা-বিবাদ হয়েছে। অবশেষে রাজি হলে সোমবার (২৪ জুলাই) রাতে নাইটকোচে ঢাকা থেকে আমাকে নিয়ে রওয়ানা হন। মঙ্গলবার(২৫ জুলাই) সকালে আমাকে গৌরনদী বাসষ্টা-ে নেমে তাকে যাত্রী ছাউনীতে বসিয়ে রেখে অটো গাড়ি আনার কথা বলে আমাকে ফেলে পালিয়ে গিয়ে মুঠোফোন বন্ধ করে দেয়।
গৌরনদী বাসষ্টা-ের অটো চালক রাসেল জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার পরেও স্বামী ফিরে না আসায় কতিপয় বখাটে তার পিছু নিলে যুবতিকে সে তার বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দেন। বুধবার (২৬ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর সন্ধানে গৌরনদী বাসষ্টা-ে আসেন। সারা দিন খোজাখুজি করে স্বামীর সন্ধ্যান না পাওয়ায় সনিয়াকে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা (ওসি) মোঃ ফিরোজ কবিরকে অবহতি করা হয়। । পরবর্তীতে বুধবার রাতেই সনিয়াকে থানায় সোপর্দ করা হয়। প্রতারক স্বামীর সামাজিক যোগাযোগ আইডি (ফেইজবুক) ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয় যায়। গউ জঁনবষ ঐধষিধফধৎ নামে এ ফেইজবুক আইডিটি পাওয়া গেলেও তাতে বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ কবির বলেন, উজিরপুরে তেরআনা নামে কোন গ্রাম না পাওয়ায় পরবর্তিতে যুবতির পরিবারকে খবর দিয়ে মা শাহানা বেগমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।